রমজান মাস শুরু হলেই বাজারে খেজুর কেনার ধুম পড়ে যায়। সারাদিন রোজা রেখে খেজুর খাওয়া সুন্নত, তাই অনেকেই মনে করেন। রোজায় খেজুর খেতেই হবে আর অন্য সময় না খেলেও হবে। অনেকেই আবার খেতে হবে জেনে খায় কিন্তু এই একটি সুন্নতের পেছনেও যে কতো উপকারিতা আছে সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানিনা। তাই আজ জানাবো আমাদের এই প্রিয় ফল খেজুরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা –
১. কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে আছে ০.৬ গ্রাম কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট। খেজুরে কোনো কোলেস্টেরল এবং বাড়তি পরিমাণে চর্বি থাকে না। ফলে আপনি সহজেই খেজুর খাওয়া শুরু করে অন্যান্য ক্ষতিকর ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
২. প্রোটিন ও প্রোটিন আছে ২.২ গ্রাম প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ ফলে পেশী গঠন করতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য খুব অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।
৩. ভিটামিন : খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন, ই১, ই২, ই৩ এবং ই৫। এছাড়াও ভিটামিন অ১ এবং সি ভিটামিন পাওয়ার আরও একটি সহজ মাধ্যম হচ্ছে খেজুর। খেজুর দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। সেই সাথে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
৪. আয়রন : খেজুরে আয়রন আছে ৭.৩ মিলিগ্রাম। আয়রন মানবদেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খেজুর প্রচুর আয়রন রয়েছেও ফলে এটা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাদের দুর্বল হৃৎপিণ্ড খেজুর হতে পারে তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ। এছাড়া গর্ভবর্তী প্রসূতি নারীদের জন্য এবং বাড়ন্ত বয়সী কিশোরীদের বাড়তি আয়রন প্রয়োজন হয়।
৫. ক্যালসিয়াম : খেজুরে ক্যালসিয়াম আছে ৬৩ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত করে। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধক খাদ্যের আঁশ খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। ৩.৯ গ্রাম আঁশ আছে ১০০ গ্রাম খেজুরে। এক গবেষণায় দেখা যায় খেজুর পেটের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের বেলায় ক্যানসারের ঝুঁকিটাও কম থাকে।
৭. ওজন কমায় : মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দেয় ক্ষুধার জ্বালা এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটা খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয় ঠিকই কিন্তু ভালো পরিমাণ ক্যালরি থাকায় এনার্জি লেবেল ঠিক রেখে কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে হজের সময় পাহাড়-পর্বত জয় করার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে ৪টা খেজুরই দেয় পরিপূর্ণ শক্তি।
৯. কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে ও খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ। যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনো কখনো ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী।
৯. সংক্রমণ : যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। খেজুর শুধু রমজান মাসেই না, সাড়া বছর জুড়েই কম বেশি খাওয়া উচিত। খেজুরে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পলিফেনল যা শরীর থেকে। টক্সিন দূর করে।
সতর্কতা : ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ৩২৪ কিলোক্যালরি। এটি ফুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ হওয়ায় যারা ওবেসিটিতে আক্রান্ত, ডায়াবেটিস এবং কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত তারা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট