সিইসি হুদার অতৃপ্তি কেবল সহিংসতায়

একহাত নিলেন শামসুল হুদা ও বদিউল আলমকে, ফোঁড়ন মাহবুব তালুকদারকে

| শুক্রবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বিএনপি বরাবর সরকারের তাবেদার আখ্যা দিয়ে দিয়ে আসছে, জাতীয় পার্টির ভাষায় অন্যের ধরিয়ে দেওয়া ফল ঘোষণা করে আসছে এই ইসি; তবে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সেসব কিছু গায়ে মাখছেন না। তার দাবি, সমালোচনাবিতর্ক যতই হোক, নিজেদের মেয়াদে কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই তারা আইনানুগভাবে সব নির্বাচন করেছেন। নূরুল হুদার ভাষায় নির্বাচন কমিশনের মত জটিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কারো বাহবা পাওয়ার সুযোগ নেই। নিজেদের কাজে সন্তুষ্টি থাকলেও একটি বিষয়ে অতৃপ্তি থেকে যাচ্ছে মাঠ প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা নূরুল হুদার। আর সেটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে। অবশ্য তার দৃষ্টিতে দল, প্রার্থী ও সমর্থকদের সহনশীলতার অভাবই নির্বাচনে সহিংসতার কারণ, যা ইসির একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। খবর বিডিনিউজের।

২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়া নূরুল হুদার কমিশনের পাঁচ সদস্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সাংবাদিকদের। নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন এসেছে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও, যেখানে আগের রাতেই ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এ বিষয়ে সিইসির ভাষ্য, ওই ধরনের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত কিছু করা যায় না। তিনি নিজে ওরকম কিছু দেখেননি, কেউ আদালতেও যায়নি।

২০১৭২০২২ মেয়াদের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনই করেছে নূরুল হুদার কমিশন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপে পড়েননি বলে দাবি করেন সিইসি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের চাপ কোনো দিনও ছিল না; কখনো ছিল না। কোথাও কখনো কোনো চাপ ছিল না। কোনো রাজনৈতিক দলের লোকের প্রভাবে প্রভাবিত হইনি। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছি। সুতরাং চাপ ছিল না।

সব নির্বাচনকে সমান গুরুত্ব দিলেও একটি অতৃপ্তির কথা বলেছেন বিদায়ী সিইসি। ‘বারবার বলেছিপরিবেশ পরিস্থিতি ভালো রাখার ক্ষেত্রে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের সহনশীল আচরণই প্রথম। নির্বাচনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ইসির নেই, যখন পর্যন্ত না প্রার্থী, জনগণ, দল, সমর্থক সহনশীল আচরণ করে। এটা কি সম্ভব? কখনো সম্ভব না; এখানেই অতৃপ্তি।’

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে আদৌ ভোট হয়েছিল? এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, এটা অভিযোগ আকারে থেকে গেছে। এ অভিযোগের তদন্ত আদালতের ইন্সট্রাকশন ছাড়া হয় না। আমি দেখিনি, আপনিও দেখেননি। আপনারা দেখেছেন? রাতে হয়েছেএটা (শুধু) অভিযোগ। এখন যদি তদন্ত হত আদালতের নির্দেশে, যদি বেরিয়ে আসত, নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত আদালতের নির্দেশে। হয়ত সারাদেশের নির্বাচনও বন্ধ করে দিতে পারত, নতুন করে নির্বাচন করতে পারত যদি সেরকম হত। রাজনৈতিক দল কেন সে সুযোগ নেয়নি, তারাই বলতে পারবে।

ভোট নিয়ে যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য এসেছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না সিইসি নূরুল হুদা। তবে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে গড়ে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে দাবি করে তিনি বলেছেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে সারাদেশে, মানুষ অংশ নিচ্ছে। ইসির প্রতি আস্থার উদাহরণ এটা। ৮১৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে কোথাও কোথাও। এরপরও যদি বলে যে জাতি নির্বাচনবিমুখ, এটা ঠিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা এবং নাগরিক সংগঠন সুজনএর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে এক হাত নিয়েছেন বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে এটিএম শামসুল হুদা সাহেব সবক দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের অনেক কাজ করার কথা ছিল, করতে পারিনি, বিতর্ক সৃষ্টি করেছি। একজন সিইসি হিসেবে তার কথা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ২০০৭০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সিইসির দায়িত্ব পালন করা এটিএম শামসুল হুদা বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসির দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, সেনা সমর্থিত সরকার ছিল; ইমারজেন্সির কারণে এটা করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে করা সম্ভব না।

বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান কমিশনকে অদক্ষ আখ্যা দিয়ে ভোটে অনিয়ম এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছেন। এ প্রসঙ্গ টেনে কে এম নূরুল হুদা বলেন, পূর্ব পরিচিত হলেও সুজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ওই সংগঠনকে কোনো কাজে সম্পৃক্ত করেনি বর্তমান ইসি। তিনি বলেন, বদিউল আলম মজুমদার এই কমিশন নিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেন। এটার একটা ইতিহাস আছে। এখানে যোগদানের পর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে নিয়ে অনেক ঝামেলা, অনিয়ম। এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, কাজ না করে টাকা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনে সভায় অনিয়ম নিয়ে সিদ্ধান্ত আছে। বর্তমান ইসির সময়ে কাজ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বদিউল এখন কমিশনের সমালোচনা করছেন বলে মন্তব্য করেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, দুই বছর আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছেন। একা একা এসেছেন। খবর পেয়েছি প্রায় ১ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ও অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে। এ লোকের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না। উনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ…, কাজ নেই। সংবাদ সম্মেলন করার বিশেষজ্ঞ উনি। আমাদের তো তার দরকার নেই।

কেবল বাইরে নয়, কমিশনের ভেতরের একজন সদস্য (মাহবুব তালুকদার) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বারবার। এ নিয়ে আপনার মতামত কী, সিইসিকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা তো একটা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এটা এর মধ্য থেকেই করতে হবে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। মাহবুব তালুকদারের প্রসঙ্গে কেএম নূরুল হুদার আরও বলেন, তিনি একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। কখনো আইসিউ, সিসিইউতে থাকেন। তিনি সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট করেছেন। ভারতে ট্রিটমেন্ট করেছেন। বছরে প্রায় ৩০৪০ লাখ টাকার ট্রিটমেন্ট করেন। এটা আমাদের নির্বাচন কমিশন বহন করে। এখন আইসিইউ, সিসিইউএর কথাগুলো, তার নিজস্ব অসুস্থতার ওখান থেকে কোট করে এনেছেন কিনা সেটা জানি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজোটে এগোতে গেলেই কোভিড হাজির হয় : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্সিং হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট