প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপি বিদেশে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। আজকে ইলেকশন সামনে নিয়ে এই লবিস্ট দিয়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকার পাই পাই হিসাব আমরা আদায় করতে চাই, পাই পাই হিসেব দিতে হবে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে একথা বলেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।
এই অর্থ অবৈধ উৎস থেকে পাওয়া দাবি করে তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ ডলার তারা খরচ করেছে। কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। আমার প্রশ্ন, এই অর্থ কোথা থেকে তারা পেল? বিদেশি ফার্মকে এই যে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি ডলার যে তারা পেমেন্ট করল, এটা কোথা থেকে পেল? এই অর্থ কিভাবে বিদেশে গেল? পাঁচ বছর ২০০১ থেকে ক্ষমতায় থেকে জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো, জঙ্গিদের রক্ষা, জাতির পিতার খুনিদের বাঁচানো, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিপরীতে আওয়ামী লীগ দেশের ভাবমূর্তি উঁচু করতে কাজ করছে। হ্যাঁ, সবসময় পিআর ফার্ম নেওয়া হয় আমাদের, যাতে বিনিয়োগ বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে, আমরা যেন বেশি রপ্তানি করতে পারি, আমাদের দেশের অধিকার সংরক্ষণের জন্য করা হয়। কিন্তু বিএনপির কাজটা কী ছিল? বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার জন্য। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দিয়ে, অসত্য তথ্য দিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। তবে জনগণ বিএনপির কথায় বিভ্রান্ত হবেন না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
র্যাবের সাবেক–বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, যারা সন্ত্রাস দমনে সফল, যারা এই দেশটাকে জঙ্গিবাদ–সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে, যারা সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে, সাধারণ মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে, তাদের উপরেই যেন আমেরিকার রাগ। তবে আমেরিকাকে পুরো দোষ না দিয়ে স্পিকারকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘরের ইঁদুর বাঁধ কাটলে কাকে দোষ দেবেন? কালকে আপনি শুনেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। এই যে সমস্ত তালিকা। এটা আমার বক্তৃতা হিসেবে আপনার কাছে আমি দিয়ে যাব, আমি চাই প্রসিডিংসটা থাক।
নির্বাচন কমিশন গঠনে তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়নের অভিযোগ নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর প্রস্তুতি আগেই নেওয়া ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের সকলকে ডেকেছিলেন তখনই তিনি বলেছিলেন, আমাদেরও প্রস্তাব ছিল। অনেক দিন থেকে মোটামুটি প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। ইসি গঠনে সুনির্দিষ্ট আইন গত ৫০ বছরে না থাকায় বরাবরই নিয়োগের সময় বিতর্ক দেখা দিচ্ছিল। তা এড়াতে ২০১২ সালে কমিশন নিয়োগের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি নামে একটি মধ্যস্থ ফোরাম তৈরি করলেও বিতর্ক থামেনি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবারও সেই পথে এগোচ্ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করার আগেই আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এই সপ্তাহের শেষ দিনে তা সংসদে পাস হয়। শেখ হাসিনা গত ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যখন ডায়ালগ করতে গেলাম, তখন তিনি বললেন, বিলটা তাড়াতাড়ি পাস করে দিলে… তিনি চান এই বিলের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান কমিশনার এবং কমিশনাররা নির্বাচিত হোক। আমরা পার্লামেন্টে নিয়ে আসলাম। কিন্তু প্রস্তুতি তো আমাদের বহু আগে থেকে ছিল। অন্য কোনো দল করেনি। আওয়ামী লীগ করল। গণতন্ত্রকে আরও আমরা শক্তিশালী করলাম। জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, বলেন তিনি।