শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশনকারীদের সঙ্গে আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছেন; এ নিয়ে সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ জনে। এছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এদিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের দাবি জাতীয় সংসদে তুলেছেন জাতীয় পার্টির দুই সংসদ সদস্য। এ ব্যাপারে ‘অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শাবি শিক্ষক সমিতি।
গতকাল রোববার আমরণ অনশন শুরুর পঞ্চম দিন সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবক সবুর খান সাংবাদিকদের বলেন, অনশনকারীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬ জন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনকারী আছেন ১২ জন। হাসপাতালে ভর্তি ১৬ জনের মধ্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটজন এবং জালালাবাদ রাগীব–রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন আটজন। গণঅনশনের ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন করে আরও পাঁচজন আমরণ অনশনে বসেছেন। আরও অনেকেই বসবেন।
এদিকে বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে অনশনকারীদের জন্য কাঠের চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকেলে ভিসির বাসভবনের সামনে ছয়টি ছোট–বড় কাঠের চৌকি নিয়ে আসা হয়।
উপাচার্যের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন : উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। এ সময় অনেক গণমাধ্যমকর্মীও সেখানে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আন্দোলনকারী বলেন, আমাদের অনশনরত ভাইবোনেরা কষ্ট করছেন; আর ভিসি ওদিকে আরাম–আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
দ্রুত পদক্ষেপ নিন, সরকারকে শিক্ষক সমিতি : উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে ‘অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শাবি শিক্ষক সমিতি। গতকাল আন্দোলনের দশম দিন রাত সোয়া ৮টার দিকে সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস গণমাধ্যমের সামনে শিক্ষক সমিতির এ প্রস্তাবের কথা জানান।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে’ গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যলয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শিক্ষক সমিতির বৈঠক করার কথা জানান তিনি।
ভিসি ফরিদের পক্ষে অন্য ভিসিদের বিবৃতি : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চাপে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। সংগঠনের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ফরিদের পদত্যাগের যে দাবি তোলা হয়েছে, তা দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত মনে করছে তারা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নীতি বহির্ভূতভাবে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে এখন যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালকে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।
সরকারের অনুমতি ছাড়া ভিসির পদত্যাগেরও ক্ষমতা নেই : সরকারের অনুমতি ছাড়া একজন উপাচার্যের পদত্যাগ করারও ক্ষমতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বিষয়টিকে দাসত্বের সঙ্গে তুলনা করে মান্না বলেন, উনি বলছেন, আমি পদত্যাগ করতে পারি যদি সরকার বলে। ভাবতে পারেন! কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষমতা নেই সরকারের অনুমতি ছাড়া এমনকি পদত্যাগ করার। এতই দাসের দাস!
উপাচার্যের কঠোর সমালোচনা করে মান্না বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন ধর্মঘট করছে। তারা যে লড়াই করছে কীসের জন্য? তারা এখনি বড় কিছু চায়নি। তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়নি, সরকারের পদত্যাগ চায়নি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ চায়। ভিসি পদত্যাগ করবেন না কেন?
উপাচার্যের অপসারণ চাইলেন জাপার সাংসদ : উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের দাবি জাতীয় সংসদে তুললেন জাতীয় পার্টির দুই সংসদ সদস্য। গতকাল সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ ও পীর ফজলুর রহমান উপাচার্যকে অপসারণের আহ্বান জানান।
জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান ও ঢাকা–৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ১১ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা অনশনে আছে। ১৬ জন ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেছে। কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। শুনলাম আজকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আছেন, বলছিলেন তোমরা তোমাদের দাবি–দাওয়া রেখে ঢাকায় আস, আমার সাথে আলোচনা করতে। আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করে এসেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে কখনও কোনো ছাত্র দেখা করতে ঢাকায় আসবে না, এটা আমরা জানি। মন্ত্রীর উচিত ছিল ডাবল মাস্ক পরে ওখানে যাওয়া।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মোনায়েম খান বহুবার আমাদের বঙ্গভবনে ডেকেছেন। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা কখনও আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গভবনে দাওয়াত খেতে যাই নাই। ছাত্ররা কেন আসবে আপনার কাছে?











