লোহাগাড়ায় মাশরুম চাষে সফলতা পেয়েছেন বিদেশ ফেরত মোহাম্মদ হোসেন (৪৫)। তিনি চুনতি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সাতগড় কুলাল পাড়ার আবদুস ছালামের পুত্র। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ছুটিতে আসেন। এরপর করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় তার ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় আর বিদেশ যেতে পারেননি। প্রায় এক বছর ছিলেন বেকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদেশ ফেরত মোহাম্মদ হোসেনের বসতঘরে পাশে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ২৪ শতক জায়গায় মাশরুমের চাষাবাদ। চারদিকে টিনের ঘেরার ভিতর ২টি শেড রয়েছে। একটিতে খড়ের স্পন প্যাকেট থেকে প্রাকৃতিকভাবে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে সারি সারিভাবে ঝুঁলছে খড়ের স্পন প্যাকেট। আর অন্যটিতে খড়ের স্পন প্যাকেট প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।
মাশরুম চাষি মোহাম্মদ হোসেন জানান, করোনকালীন সৌদি আরবের ভিসা বাতিল হয়ে যাবার পর চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলেন। এমন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাগুরা ড্রিম মাশরুম সেন্টারের একটি বিজ্ঞাপন দেখেন। এরপর তাদের সাথে যোগাযোগ করে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ১০ দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় এসে শেড নির্মাণ করে এক হাজার স্পন প্যাকেট দিয়ে মাশরুম চাষাবাদ শুরু করেন। এক বছরের ব্যবধানে তার শেডে মাশরুমের স্পন প্যাকেট দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার। তিনি ওয়েস্টার পিও-২ জাতের মাশরুম চাষাবাদ করেন। প্রতিদিন ১৫-১৬ কেজি মাশরুম সংগ্রহ করতে পারেন। যা চট্টগ্রাম নগরী, পটিয়া ও পার্বত্য বান্দরবানে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজি মাশরুম পাইকারী দুশত থেকে আড়াইশত টাকায় আর খুচরা তিনশত থেকে সাড়ে তিনশত টাকায় বিক্রি হয়। তবে গরমের দিনে মাশরুমের দাম বৃদ্ধি পায়। প্রতি মাশরুমের স্পন প্যাকেট দুই মাস ফলন দেয়। মাশরুম চাষাবাদ দেখভাল করার জন্য রয়েছে ৭/৮ জন কর্মচারী। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। তিনি জানান, ঢাকার সাভার ও কুমিল্লা থেকে মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করেন। এছাড়া তিনি নিজেই মাশরুমের বীজ তৈরি করছেন। মাশরুমের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে মোহাম্মদ হোসেন জানান, মাশরুম চাষের জন্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি খড় সিদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনে প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে। দিনে ৮-১০ বার স্পনগুলোতে পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিনে মধ্যে পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়।
মোহাম্মদ হোসেন জানান, মাশরুম চাষ সমপ্রসারণের মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। এলাকার বেকার যুবকরা বা যেকেউ মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন। দরকার হলে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও দিবেন। যেকেউ চাইলে তার কাছ থেকে মাশরুমের স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। উৎপাদিত মাশরুম তার মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারবে। ভবিষ্যতে মাশরুমের বীজ গবেষণা ল্যাব স্থাপনের ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। সরকারি সহযোগিতা ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে এই চাষের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে পারবেন।
স্থানীয় মো. নুরুচ্ছফা জানান, আগে এলাকার মানুষের পুষ্টিগুণে ভরপুর মাশরুম সম্পর্কে ধারণা ছিল না। এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন প্রথম মাশরুম চাষাবাদ শুরু করেন। তার সাফল্য দেখে অনেকে মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অন্যদিকে তার মাশরুম চাষে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅঙিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি, ঔষধিগুণ এবং স্বল্প পুঁজি ও শ্রম ব্যয় করে অধিক আয় করা সম্ভব বলে ইতোমধ্যেই এটি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারই ধারাবাহিক লোহাগাড়াতেও পরিচিত হয়ে উঠছে মাশরুম চাষ। তবে, উপজেলায় জানামতে মোহাম্মদ হোসেন ছাড়া আর কেউ বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করেন না। তার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যেকোনো পরামর্শে উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় তার পাশে থাকবে। লোহাগাড়ায় বেকার যুবকদের জন্য মোহাম্মদ হোসেন অনুকরণীয়। তাকে দেখে বেকার যুবকরা মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে প্রশিক্ষণের জন্য সকল ধরণের সহযোগিতা করা হবে।