রপ্তানি আয় বাড়বে ৭৮ শতাংশ প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম বন্দর

তিন বছরের টার্গেট ।। বে টার্মিনাল আংশিকভাবে হলেও চালু করতে হবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ৩ বছরের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়কে ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রধান মাধ্যমই হবে চট্টগ্রাম বন্দর। অপরদিকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে হয়েছে। ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৬১ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধায় যা এক কথায় অসম্ভব। এই অসম্ভবের মাঝে রপ্তানি আয় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫৭ লাখ ২১ হাজার ৮৯৫ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য যা অকল্পনীয় বলে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল চালু এবং বে টার্মিনাল আংশিকভাবে চালু করার উপর গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমের উপরই দেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ নির্ভর করে। আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের উপর আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। বিদেশ থেকে লাখ লাখ কন্টেনার বোঝাই করে আনা কাঁচামাল ব্যবহার করেই রপ্তানি পণ্য উৎপাদন এবং বিদেশে প্রেরণ করা হয়। এতে করে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারও দেশের রপ্তানি আয়ের অনেক বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানির প্রায় পুরো কার্যক্রমই সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় নিশ্চিত করেছে।
সরকার আগামী ২০২৪ সালে দেশের রপ্তানি আয় ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মাত্র ৩ বছরের মাথায় বিশাল অংকের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরকে বড় ধরনের চাপে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে হ্যান্ডলিং করতে হয়েছে ৩২ লাখ সাড়ে চৌদ্দ হাজারের মতো কন্টেনার। ৮০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করতে হ্যান্ডলিং করতে হবে ৫৭ লাখেরও বেশি কন্টেনার। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ। এই ধারা ধরে রাখা সম্ভব হলে ২০২৪ সালে বন্দর সর্বোচ্চ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হবে সাড়ে ৪৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার। যা চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুবিধায় একেবারে অসম্ভব। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধায় শুধু রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই নয়, দেশের স্বাভাবিক চাহিদা মোকাবেলাও সম্ভব হবে না চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরকে নতুন করে এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি এবং থমকে থাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গতিশীলতা তৈরি করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা গত ৫ বছর ধরেই বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনালসহ জেটি এবং টার্মিনালের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলে আসছি। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে এটি চালু হতে হতে আমাদের এই ধরনের আরো অন্তত পাঁচটি বাড়তি টার্মিনালের প্রয়োজন দেখা দেবে। ৮০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ করতে আমাদেরকে অনেকগুলো টার্মিনাল লাগবে, জেটি লাগবে। তবে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে বে টার্মিনাল। বে টার্মিনালের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে মাহবুবুল আলম বলেন, হাতে একদম সময় নেই। জরুরিভিত্তিতে বে টার্মিনাল চালু করতে হবে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বন্দর অনেক বেশি কার্যকর। সেটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তবে শুধু জাহাজ আসা যাওয়াই বন্দরের কাজ নয়, বন্দরের আরো বহু কাজ রয়েছে। সার্বিক কার্যক্রমে বন্দরের সক্ষমতা বহু বাড়াতে হবে। নতুন এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে আমাদের আগামী দুই বছরের চাহিদা মেটানোও সম্ভব হবে না। তিনি বে টার্মিনাল নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিষয়টি খুবই জরুরি। বন্দরের সক্ষমতার অভাবে দেশের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জেটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ইকুইপমেন্ট বহরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে।
বিকেএমইএর পরিচালক লায়ন মীর্জা আকবর আলী চৌধুরী ৮০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। বে টার্মিনালকে অবশ্যই অপারেশনে আনতে হবে। বাড়াতে হবে জেটির সংখ্যা। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা না হলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনভাবেই সম্ভব হবে না। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলেও মীর্জা আকবর আলী চৌধুরী মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ মাস পর শনাক্তের সংখ্যা ফের ৭০০ ছাড়াল, মৃত্যু ৩
পরবর্তী নিবন্ধপ্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাল