চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারী সমিতির সাধারণ সভায় সমিতির কার্যালয়ে জুয়া কান্ড নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা হয়নি। উল্টো এই জুয়া কান্ডের সাথে জড়িতদের পুরষ্কৃৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বেশ কয়েকজন রেফারী। কিন্তু তাদের মুখ খুলতে যেন মানা। তারপরও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রেফারী জানান রেফারী সমিতিতে এত বড় একটি জুয়া কান্ড ঘটে গেলেও তার যেন লেশ মাত্র নেই সমিতিতে। বেশ কয়েকজন রেফারী ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন জুয়া কান্ডের পর বেশ কয়েকটি নাটক হয়েছে। আর নাটকের শেষ অংশ হচ্ছে জুয়া কান্ডের হোতারা বহাল তবিয়তে। বলা যায় আরো প্রমোশন হয়েছে। গত বছর ১ জুন রেফারী সমিতির জুয়ার আখড়ায় হানা দেয় পুলিশ। আটক করা হয় ১৯ জুয়াড়ি সহ বিপুল পরিমান নগদ টাকা। এরপর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিলগালা করে দেয় রেফারী সমিতির কার্যালয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। আর সে তদন্ত কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে রেফারী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরনকে সারা জীবনের জন্য এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অবাঞ্চিত করা সহ সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে অবাঞ্চিত করার সুপারিশ করে। পরবর্তীতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভায় সে রিপোর্ট পর্যালোচনার আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোন কিছুই আলোর মুখ দেখেনি। জুয়া কান্ডের পর রেফারী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করেন। কিছুদিন তিনি স্টেডিয়ামে না আসলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে তিনি যখন বুঝতে পারেন তার কোন শাস্তি হবে না তখন ধীরে ধীরে তিনি স্টেডিয়ামে আসতে শুরু করেন।
গত সপ্তাহে সম্পন্ন হয়েছে রেফারী সমিতির নির্বাচন। সেখানে বেশ কয়েকটি পদে পরিবর্তন এলেও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রয়েছেন জুয়া কান্ডের সে হোতা। আর তাতেই সাধারন রেফারীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। তারা বলছেন অপরাধ করে যে পুরস্কার পাওয়া যায় তার বড় উদাহরণ এই নির্বাচন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সাধারণ সভায় সমিতির নানা বিষয়ে জানার অধিকার রয়েছে সদস্যদের। তাহলে কেন আপনারা প্রশ্ন তুললেন না জুয়া কান্ডের ব্যাপারে। জবাবে বেশ কয়েকজন রেফারী জানান, সেখানে প্রশ্ন তুললে সমিতি থেকে বের করে দেওয়া হবে। যেমনভাবে অতীতে অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদ করার কারণে। আর সে অবিচারের কোন প্রতিকার চাওয়ারও জায়গা নেই সাধারণ রেফারীদের। তাই কে করবে প্রশ্ন। তার চাইতে বরং নীরবে সহ্য করে যাওয়াই ভাল। রেফারী সমিতির আগের নির্বাচনগুলো বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হলেও এবারের নির্বাচনটা হয়েছে একেবারে চুপিসারে। আগের নির্বাচনগুলোতে বড় বড় ব্যানার ঝুলতো সমিতির কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু এবারে কেউ জানতেও পারেনি কখন নির্বাচন হয়েছে। সবকিছু সম্পন্ন করার পর জানানো হয়েছে সাধারণ সদস্যদের। তেমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। আগের একাধিক কমিটিতে থাকা একজন রেফারী বলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার তদন্ত কমিটি, বাংলাদেশ রেফারী সমিতি, এমনকি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও চট্টগ্রামের রেফারী সমিতির জুয়া কান্ড নাড়া দিয়েছে। কিন্তু কোন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি এই অপরাধের সাথে জড়িত কিংবা তদন্ত কমিটি কর্তৃক চিহ্নিতদের। উল্টো তারা পুরস্কৃত হলেন। যাদের অবাঞ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছিল তারা দাপটের সাথে খেলা পরিচালনা করেছে। যাদের অবাঞ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছিল তারা বুক ফুলিয়ে হেটেছে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। রেফারী সমিতির নির্বাচনের খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ ধরনের ঘটনার কারনে আরো বেশি অপরাধীর জন্ম হবে। তারা বলেন আজ যদি তদন্ত কমিটির সুপারিশ কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হতো তাহলে অপরাধ প্রবণতা কিছুটা হলৌ কমে আসতো। এখন হয়তো আরো দ্বিগুণ উৎহাসের সাথে জুয়ার আসর বসবে সেখানে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির কার্যালয়ে জুয়ার আসরকে ঘিরে যখন বিরোধ সৃষ্টি হয়, তখন সাথে সাথে ভেঙ্গে দেওয়া হয় সমিতির কমিটি। সব পক্ষকে এক করে করা হয় নির্বাচন। অথচ রেফারী সমিতিতে ঘটল উল্টো। অথচ ফুটবল খেলোয়াড় সমিতিতে পুলিশ অভিযান চালায়নি। রেফারী সমিতিতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অথচ ভাঙ্গা হলো না কমিটি। ডাকা হলো না বঞ্চিতদের। নেওয়া হলো না কোন ব্যবস্থা। উল্টো জুয়া কান্ডের হোতাদের পুরস্কৃত করা হলো। সত্যিই সেলুকাস! থানা, পুলিশ, তদন্ত কমিটি, নানা হম্বি তম্বি সব শেষ। হয়তো কদিন পর মানুষ ভুলেই যাবে স্টেডিয়াম কম্পাউন্ডে অবস্থিত রেফারী সমিতির কার্যালয় থেকে জুয়াড়ি আটক করা হয়েছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল।