বন্ধ হচ্ছে না কৃষি জমিতে আগ্রাসন

মহাসড়কের পাশে পাহাড়-মেঘের মনোরম দৃশ্য হারিয়ে যাবে

মীরসরাই প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

দিনে দিনে কমছে আবাদি কৃষি জমি। শিল্প স্থাপনে কৃষি জমির ব্যবহার বন্ধে সরকার দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বন্ধ হচ্ছে না কৃষি জমি বিনষ্টের আগ্রাসন। মীরসরাইয়ে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৩৫ হাজার একর জমিতে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পজোন তথা ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর’ এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সেখানে অল্পদিনের মধ্যেই উৎপাদনে যাবে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী এখনো শিল্পাঞ্চলের বাইরে শিল্প স্থাপনের জন্য কৃষি জমি কিনতে ব্যস্ত। মীরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান গৃহায়ন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি এই বিষয়ে উপজেলার ভূমি ও নির্বাহী প্রশাসনে শিল্পোদ্যাক্তাদের জন্য কৃষি জমি রেজিস্ট্রি বিষয়ে বিধিনিষেধ জারি করলেও কেউ মানছে না। আইনের ফাঁক দিয়েই কৃষি জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে বলে জানিয়ে এই তৎপরতা রোধে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে জানালো প্রশাসন।
বিশেষ করে চট্টগ্রামে প্রবেশ করলেই জেলার সর্বউত্তর প্রান্ত মীরসরাই উপজেলার ধূমঘাট পেরিয়ে মহাসড়কের পূর্ব দিকে তাকালেই সারি সারি পাহাড়, তার উপর মেঘেদের মেলা যেন ভিন্ন দেশের চিত্র দেশের মধ্যেই দেখা যায়। কোথাও সবুজের প্রান্ত পেরুলেই পাহাড়ের ঢাল যেন মেঘ ছুঁয়ে আছে। কোথাও আবার আকাশ ছোঁয়া উঁচু পাহাড়গুলোতে মেঘ ছুঁই ছুই অবস্থা যেন দার্জিলিংয়ের আবহ। আবার কখনো বর্ষার দিনে পাহাড়ের গায়ে ধোঁয়াশা মেঘের ওড়াউড়ি, প্রভাতের সূর্যের আলো যেন হিমালয়ের কাঞ্চনঝঙ্ঘা সাদৃশ। এমন পরিবেশ শুধুমাত্র এই চট্টগ্রামের প্রবেশপথ মীরসরাইয়েই মিলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশের এ কৃষি জমির তেপান্তরজুড়ে যদি মিল কারখানা গড়ে ওঠে তখন এ নয়নাভিরাম দৃশ্য হারিয়ে যাবে প্রকৃতি থেকে। পৃথিবীর অনেক দেশে এ রকম এসব দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন। প্রকৃতির অকৃপণ হস্তে সৃজিত এমন দৃশ্য আবার কৃষি অর্থনীতিতেও রাখছে বিশেষ অবদান। মীরসরাই সদর সংলগ্ন ১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের পোলমোগরা গ্রামের আবুল কাশেম বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীত দিকের মাঠে শিল্পোদ্যোক্তাদের কেনা জমিতে খুঁটি আর খুঁটি বলে দিচ্ছে প্রকৃতির নয়নাভিরাম বর্তমান দৃশ্য আর হয়তো বেশিদিন থাকবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ( ১৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে পরিদর্শনকালে খৈয়াছরা, ওয়াহেদপুর, নিজামপুর ও পূর্ব দুর্গাপুরের রায়পুরের অংশে এখনো এমন অনেক খুঁটি দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে অনেক প্রতিষ্ঠান কিছুদিনের জন্য তাদের সাইনবোর্ড সরিয়ে রাখে। পরে আবার মাটিতে পুঁতে দেয় সাইনবোর্ড। মীরসরাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলায় গত ১০ বছরে কৃষি জমি কমেছে ২ হাজার হেক্টর। অন্তঃত ৫ শতাধিক কৃষক হয়েছেন বেকার।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম জানান, গত ১০ বছর পূর্বে উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার হেক্টর। আবাদী জমি ছিল প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর। শিল্প স্থাপনে কমে যাওয়া ২ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে মহাসড়কের পাশে উর্বর কৃষি জমি ছিল অন্তঃত ৬০ হেক্টর। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছর পরে মহাসড়কের পাশে আর কৃষি জমি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। কৃষি বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মনজুরুল হুদা থেকে জানা গেছে, একইভাবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩২ হাজার একর জমি বিনষ্ট হয়েছে। যা আমাদের খাদ্য ঘাটতি ও কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষি ও পরিবেশে বিপর্যয় অনিবার্য। অথচ সরকার কৃষি জমি রক্ষা ও
শিল্পোদ্যাক্তাদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতেই গড়ে তুলেছে শিল্পজোন এবং সব ধরনের সহযোগিতা করে চলেছে। আবার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার আইনশৃংখলা সভা সহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উপজেলার ভূমি ও নির্বাহী প্রশাসনের কাছে নির্দেশনা দিয়ে আসছেন কোনোভাবেই যেন কোনো শিল্প উদ্যোক্তার কাছে জমি রেজিস্ট্রি দেয়া না হয়। শিল্পজোনের বাইরে কোনো শিল্প যেন না হয় সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানান তিনি। এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, আমরা এমপি মহোদয়ের নির্দেশনা মেনে চলছি। তবুও কেউ কেউ হয়তো আইনের ফাঁক দিয়ে তথ্য গোপন করে জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে পারে। এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি আইন প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে কার্যকর করতে আমাদের আরো সুবিধা হয়। এই বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি জানান, তিনি বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করবেন এবং আইন প্রণয়নের প্রস্তাবও রাখবেন। পাশাপাশি প্রশাসনকেও এই বিষয়ে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইসিটি আইনে গায়ক আসিফের বিচার শুরু
পরবর্তী নিবন্ধভয়াবহতা কম হলেও টিকাহীনদের জন্য ওমিক্রন বিপজ্জনক : ডব্লিউএইচও