মুক্তির আশায় শহরে এসে ওদের ঠাঁই হয় অন্ধকার জগতে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

দারিদ্র থেকে মুক্তি পেতে কিংবা প্রেমিক বা স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়ে লোকনিন্দা থেকে রেহাই পেতে, দালালের কথায় ভুলে শহরে আসে তারা ভালো বেতনে চাকরির আশায়। মুক্তি পাওয়া হয় না তাদের; উল্টো অন্ধকারের চোরকুঠুরিতে ঠাঁই হয়। নগরীর অভিজাত এলাকা খুলশী, ডবলমুরিং, চান্দগাঁও, হালিশহর, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ইপিজেডসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে অথবা হোটেলের রুম ভাড়া করে একাধিক চক্র দালালদের কাছ থেকে এদের কিনে নেয়। এরপর বাধ্য করে দেহ ব্যবসায় নামতে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডাকসাইটে কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে চলছে এ ব্যবসা। প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় এসব ফ্ল্যাট বাড়িতে র‌্যাব কিংবা পুলিশের অভিযান চলে কদাচিৎ। অত্যন্ত গোপনে চলতে থাকা এ ব্যবসার কথা জানাজানি হলে এলাকাবাসীর চাপের মুখে বাসা বদলাতে বাধ্য হয় তারা। তখন নতুন এলাকায় নতুন পরিচয়ে পুরনো ব্যবসা জমিয়ে তুলে কিছুদিনের মধ্যেই।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান আজাদীকে বলেন, এটা এখন খুবই বেড়ে গেছে। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এ অপরাধ বন্ধ করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, এসিড সন্ত্রাস দমন আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলে এ অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে যারা এসব মেয়েদের জোরপূর্বক পতিতা বৃদ্ধিতে বাধ্য করছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি মানব পাচার আইন অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে তাহলে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হতে বাধ্য। এ ধরনের কয়েকটি নজীর পুলিশ সৃষ্টি করলে এ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু অভিযানে যে মেয়েগুলোকে ধরা হয়, তাদের সিএমপি অ্যাক্টে পুলিশ ‘পতিতা’ বলে আদালতে চালান দেয়, যা অমানবিক। এর ফলে দালালরা আদালতে ৫০০/৬০০ টাকা জরিমানা দিয়ে মেয়েগুলোকে মুক্ত করে নিয়ে পুরনো ব্যবসায় ফিরিয়ে নেয়।
সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি নগরীর চান্দগাঁওয়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে সংঘবদ্ধ চক্রের সাত জনকে আটক করেছে পুলিশ। বহদ্দারহাট এসএ হোটেল থেকে তাদের আটক করা হয়।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান আজাদীকে বলেন, বহদ্দারহাট এলাকায় একটি হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে তিনজন নারীসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে। হোটেল মালিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের এনে অসামাজিক কাজে বাধ্য করানোর মূলহোতাসহ ৬ জনকে আটক করে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম। এ সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক তিন কিশোরীসহ ৪ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপল।
চাকরির প্রলোভনে এনে একটি ভাড়া বাসায় আটকে রেখে দুই তরুণীকে দিয়ে দীর্ঘদিন পতিতাবৃত্তি করাচ্ছিল একটি চক্র। এই তরুণীরা পরে কৌশলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করেন। পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ৩ আগস্ট পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন বয়সী তরুণীদের আটকে রেখে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ। এ সময় ঐ বাসা থেকে আটকে রাখা ৫ জন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের প্রায় দেড়মাস যাবত আটকে রেখে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২৫ জুলাই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বায়েজিদের রৌফাবাদ সোহাগ কলোনিতে জোরপূর্বক আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কব্জায় থাকা দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। ১৩ জুলাই ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পাহাড়তলী থানার বাঁচা মিয়া রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে শাহনাজ বেগম (৩০) নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং আটকে রাখা তিন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরিব, অসহায় নারী ও শিশুদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় ওঁমকার হত্যায় ৪ জনকে আসামি করে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধথানা বেষ্টনীর মধ্যেই ধর্ষণ করল পুলিশ!