করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তারে হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু রোগী ওমিক্রন না ডেল্টায় সংক্রমিত, তা শনাক্তের সহজ কোনো উপায় না থাকায় চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে গিয়ে ডাক্তাররা বিপাকে পড়ছেন। তারা বলছেন, কোভিডের এই দুটি ধরনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা; আর ওই পার্থক্যটুকুই হয়ে উঠতে পারে রোগীর জীবন-মরণের প্রশ্ন। খবর বিডিনিউজের।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেল্টায় সংক্রমিত যে রোগীরা উচ্চ-ঝুঁকিতে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে দুই ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি দারুণ কাজে লাগতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এ দুই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। কিন্তু ওমিক্রনের বেলায় ওই ওষুধগুলোতে উপকার পাওয়ার আশা কম। তাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় এক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি কার্যকর হতে পারে, কিন্তু তার সরবরাহ খুবই কম।
কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হল আরটিপিসিআর পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় রোগীর শরীর থেকে ভাইরাসের নমুনা নিয়ে মিলিয়ে দেখা হয় সেটি করোনাভাইরাস কি না। কিন্তু সেটা করোনাভাইরাসের কোন ধরন, ডেল্টা না ওমিক্রন, তা কেবল আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ধরা সম্ভব না। সেজন্য প্রয়োজন হয় জিন বিন্যাসের বিশ্লেষণ বা জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই জটিলতা কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একটি পরীক্ষার সুপারিশ করছেন, যার মাধ্যমে সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে ওমিক্রনের জিনগত বৈশিষ্ট শনাক্ত করা যেতে পারে।
ডেল্টায় সংক্রমিতদের ক্ষেত্রে রিজেনেরন ও এলি লিলির তৈরি করা দুটি অ্যান্টিবডি থেরাপি বেশ কাজে দিচ্ছে। অন্যদিকে ওমিক্রনের রোগীদের ক্ষেত্রে গ্ল্যাঙোস্মিথক্লাইন ও ভির বায়োটেকনোলজির তৈরি করা আরেক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি ভালো ফল দেখিয়েছে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিজের সহকারী পরিচালক ড. অ্যালেঙ গ্রেনিঞ্জার বলেন, যেহেতু দুই ভ্যারিয়েন্টই সক্রিয়, সেহেতু আগামী কয়েক সপ্তাহ রোগীদের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে খুবই কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যারা করোনাভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, ড. গ্রেনিঞ্জার তাদের একজন। কিন্তু কোন রোগী ডেল্টায় আক্রান্ত আর কে ওমিক্রনে সংক্রমিত, তা বোঝার সহজ কোনো পদ্ধতি পাওয়ার বিষয়ে তিনিও আশাবাদী নন।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক সিডেনার বলেন, জিনোম-সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ভাইরাসের ধরন শনাক্ত করতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। ফলে হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে যখন চিকিৎসা শুরু করা দরকার, সেই সময়ের মধ্যে জানা যায় না ওই ভাইরাস ডেল্টা না ওমিক্রন। ফলে প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।












