পণ্যের মান বজায় রেখে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোতে গুরুত্বারোপ

| মঙ্গলবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্য রপ্তানিকারকদের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, নিজের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আপনারা পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে যেন বাজার ঠিক রাখতে পারেন, আরও উন্নত করতে পারেন, সেদিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দেবেন। গত শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাজাতে উদ্যোক্তাদের গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। কোন পণ্যের কেমন চাহিদা, কোনটির মান কোন ক্ষেত্রে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, সে দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক কূটনীতির উপর জোর দিচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিটি দূতাবাসকে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩টি দেশের বিষয়ে আমরা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি। সকলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরও সহজভাবে করতে পারি অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যে মর্যাদা পেয়েছি, সেটাকে ধরে রেখে যদি কোনো চ্যালেঞ্জ আসে, সেটাও যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি সেই বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা দেখেছি, কেবল রোজা ও ঈদ এলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই)-এর অভিযান চলে। কিন্তুপণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য সারা বছর এ অভিযান বা মনিটারিং দরকার। সারাবছরই পণ্যের মান যাচাই নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিএসটিআইকে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে আঞ্চলিক অফিস সমপ্রসারণ, জনবল, ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বাড়ানোসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, খাদ্যজাতীয় পণ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারলে পোশাকের মতো এ ধরনের পণ্য বিশ্ববাজার ধরতে পারবে। এ দেশে যে সস্তা শ্রম রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে স্বল্প ব্যয়ে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা যাবে। বিশ্ববাজারে দেশি পণ্যের প্রসারে পণ্য ও সেবার নির্ধারিত মান বজায় রাখা আবশ্যক। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা আরও সচল ও বেগবান করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সেবার প্রসার ঘটাতে হবে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পণ্যের দৃষ্টিনন্দন মোড়ক নয়, গুণগত মানের ক্ষেত্রেও বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের যে অবস্থানে পৌঁছেছে, শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিএসটিআইকেও সে পর্যায়ে উন্নীত হতে হবে। তাঁরা গ্রাম-গঞ্জে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিএসটিআই’র কার্যক্রম সমপ্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মান প্রণয়নের পাশাপাশি মান বজায় রাখা, লাইসেন্সবিহীন পণ্য এবং নকল পণ্য/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএসটিআই অভিযান/ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন করলে ক্রেতারা ঠকবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতা হারাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে মানসম্পন্ন রুচিসম্মত পণ্য উৎপাদন করার পাশাপাশি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রমকেও মানসম্মত করার আহ্বান জানান।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও দেশের রপ্তানি বাড়ার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু সামনের দিকে আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সময় কিন্তু এখন আমাদের। সময় বাংলাদেশের। এই কথাটা মনে রাখতে হবে।
পণ্যভিত্তিক রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর একটি পণ্যকে বর্ষপণ্য অর্থাৎ প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালের জন্য আইসিটি পণ্য সেবাকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পণ্যের মান বজায় রেখে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর ওপর যে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে