স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চায় চসিক

হোল্ডিং ট্যাক্স ।। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ ।। করের বোঝা বাড়ার শঙ্কা নগরবাসীর

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

স্থগিত থাকা পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমূল্যায়নের (রি-এসেসমেন্ট) আলোকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৌরকর আদায় করতে চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এলক্ষ্যে ২০১৭ সালে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে করের ‘বোঝা’ বাড়বে নগরবাসীর উপর। এমন হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দেন করদাতারা।
২০১৭ সালে পৌরকর পুনর্মূল্যায়নের সময় মেয়র ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। অর্থাৎ তার আমলে নির্ধারণ করা পৌরকরই আদায় করতে চান বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অবশ্য বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৩ জুন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়ে চিঠি দেয় চসিক। একই পত্রে স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে এসেসমেন্ট করার প্রস্তাবনাও ছিল।
পরবর্তীতে ২৪ জুন তিনটি তথ্য জানাতে চসিককে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইট নির্ধারণ ও আদায় কার্যক্রম অটোমেশনের বর্তমান অগ্রগতি, ২০১৬-২০১৭ সনে পুনর্মূল্যায়িত কর আদায়ের বা নতুনভাবে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে আদায়ের কার্যক্রম ম্যানুয়ালি নাকি অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে? তবে গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ে স্থগিতাদেশের প্রস্তাব দিয়ে পাঠানো চিঠিতে তথ্যগুলো উল্লেখ করেনি চসিক।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পাঁচ বছর পরপর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি হোল্ডিংয়ের (স্থাপনা) কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। তবে বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনায় তা স্থগিত করা হয়। ফলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্সেশান রুলস অ্যাক্ট ১৯৮৬ এর ২১ ধারা মতে, সিটি এলাকায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সকল প্রকার স্থাপনার পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সরেজমিন সংগ্রহ করে পৌরকর নির্ধারণ করা হয়। আইনটির আলোকে ২০১৬ সালে গৃহ ও ভূমির পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করে চসিক। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ প্রথম দফায় নগরের ১১টি ওয়ার্ডে এসেসমেন্ট শুরু করে এবং একই বছরের ২০ জুন শেষ হয়। দ্বিতীয় দফায় একই বছরের ১৮ অক্টোবর বাকি ৩০টি ওয়ার্ডে এসেসমেন্ট শুরু করে এবং তা শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৫ জানুারি। পুর্নমূল্যায়ন শেষে তা ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। এতে নগরের ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪৮টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৯ টাকা পৌরকর আদায়ের প্রস্তাব করে চসিক। যা পূর্বের অর্থবছরে ছিল ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ টাকা।
জনসম্মুখে চসিকের এসেসমেন্টর বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর প্রস্তাবিত পৌরকের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান ভবন মালিকরা। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে তারা মাঠে নামেন। এক্ষেত্রে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেন। প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীও এর বিরোধিতা করেন। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর গৃহকর বৃদ্ধি করায় জাতীয় সংসদেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা।
এরপর একই ২৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রণালয়টির শীর্ষ কমর্তকর্তারা। এতে সারা দেশের গৃহকর কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় না আসা পর্যন্ত এসেসমেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। যা ১০ ডিসেম্বর চসিককে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অবশ্য এর আগে মৌখিক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর থেকে এসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করেছিল চসিক। স্থগিতের আগের দিন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৩৫২ জন হোল্ডার আপিল করেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৮ টি আপিল নিষ্পত্তিও করা হয়ছিল। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্থগিত হওয়া রি-এসেসমেন্টের আলোকে পৌরকর আদায়ে প্রস্তাব দেন। এর প্রেক্ষিতে ২৫ অক্টোবর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারও করে নেয় মন্ত্রণালয়। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পূর্বের স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় সাধারণ ভবন মালিকরা রক্ষা পায় ‘অতিরিক্ত’ করের বোঝা থেকে। এখন বর্তমান মেয়রের প্রস্তাবে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে চাপে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, পূর্বে ভবনের মূল্যায়ন করা হত বর্গফুটের ভিত্তিতে। কিন্তু ২০১৬-২০১৭ সালে করা হয় ভবনের ভাড়া বা আয়ের বিপরীতে। সেখানেই আপত্তি ছিল করদাতাদের। তাদের দাবি, এ কারণেই পৌরকরের হার বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী দৈনিক আজাদীকে বলেন, তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের পর যে কর ধার্য করা হয়েছিল তা ছিল যৌক্তিক। এটা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না অনেকেরই। সে জন্য তা বাতিলের জন্য মাঠে নেমেছিলেন নগরবাসী। এখন যদি সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে একই কর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পৌরকর বাড়ানো হবে না। আমি নিজেও ট্যাঙ বাড়ানোর পক্ষপাতী না। তবে করের আওতা বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগে একতলা ভবন ছিল সেটা এখন যদি পাঁচতলা হয় তার ট্যাঙ তো দিতে হবে।
এ দিকে গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী। এসময় হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ট্যাঙ না বাড়িয়ে যারা দিচ্ছে না তাদের আওতায় আনার ব্যবস্থা করেন। কেউ যেন ট্যাঙ ফাঁকি দিতে না পারে।’
উল্লেখ্য, চসিকের নিজস্ব আয়ের মূল উৎস পৌরকর। সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ রেইট রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃহত্তর চট্টগ্রামের ৩২ ইউপিতে ভোট কাল
পরবর্তী নিবন্ধসিলেট থেকে কিশোরী উদ্ধার, অপহরণকারী আটক