‘চট্টগ্রামের ক্রিকেট লিগকে ঢাকার ক্রিকেট লিগ বানিয়ে দিল সিজেকেএস’ শিরোনামে গত ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের পর তা নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ক্রিকেটাররা দাবি তোলে চট্টগ্রামের লিগে ঢাকা বা চট্টগ্রামের বাইরের ক্রিকেটারের সংখ্যা কমানোর। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি কিছুটা হলেও পুরণ হয়েছে। ‘নাই মামার চাইতে কানা মামা ভাল’ প্রবাদের মত কিছুটা হলেও কমেছে চট্টগ্রামের লিগে বাইরের ক্রিকেটারের সংখ্যা। প্রিমিয়ার লিগে আগে যেখানে একাদশে ছয়জন খেলানোর সিদ্ধান্ত ছিল সেটা বদল করে চার জনে নিয়ে এসেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটির সভায়। আর প্রথম বিভাগ লিগে যেখানে একাদশে চারজন চট্টগ্রামের বাইরের ক্রিকেটার রাখার সুযোগ ছিল সেটা কমে দাঁড়িয়েছে তিনজনে। যদিও ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের বেশিরভাগ খুশি হতে পারেনি, তারপরও স্বস্তির জায়গা এটা যে কিছুটা হলেওতো কমেছে। যদিও এখনো প্রিমিয়ার ডিভিশনে একাদশে চারজন খেলবে চট্টগ্রামের বাইরের ক্রিকেটার আর প্রথম বিভাগে খেলবে তিনজন। চট্টগ্রামের ক্রিকেটের একটি দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য রয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ চট্টগ্রামের ক্রিকেটারই খেলে। একটা সময় ছিল যখন বেশিরভাগ চট্টগ্রামের বাইরের ক্রিকেটার খেলতো। পরে এক রকম আন্দোলন করে ক্রিকেট সংগঠকরাই সেটা বন্ধ করেছে। আমরা প্রায়শই বলে থাকি জাতীয় দলে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব কমে যাচ্ছে। ক্রিকেটারদের ভাষ্য মতে চট্টগ্রামের ক্রিকেটাররা খেলতে না পারলে ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে কোথা থেকে। আবার ক্রিকেট সংগঠকদেরও রয়েছে বড় অভিযোগ। আর সেটা হচ্ছে ক্রিকেটাররা তাদের মানের চাইতে বেশি অর্থ দাবি করে বসে থাকে। যে সব ক্রিকেটার ঢাকায় প্রথম বিভাগ লিগেও খেলে না তারা যে পরিমান অর্থ দাবি করে বসে সে অর্থ দিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্রিকেটার এনে খেলানো যায়। তাই স্বাভাবিকভাবে ক্লাবগুলো ঢাকার ক্রিকেটারের দিকে ঝুঁকে। তার উপর শিরোপা জয়ের একটা লক্ষ্যতো বেশিরভাগ ক্লাবেরই থাকে। কিন্তু ক্রিকেটারদের অসম অর্থ দাবি ক্লাবগুলোকে একরকম বিরক্ত করে তুলেছে।
গতকাল এক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জানান, যে ক্রিকেটার আগের লিগে এক লক্ষ টাকা দিয়ে খেলেছে সে এই লিগে এসে আড়াই লক্ষ টাকা দাবি করে বসেছে। তিনি এবং তার মত অনেক ক্লাব কর্মকর্তা আবার এই অসম প্রতিযোগিতার জন্য কতিপয় ক্লাব কর্মকর্তাকে দায়ি করছেন। তারাই ক্রিকেটারদের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ক্লাবগুলো চট্টগ্রামের বাইরে থেকে ক্রিকেটার এনে খেলাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। প্রিমিয়ার লিগের বেশিরভাগ ক্লাব এবং প্রথম বিভাগ লিগের প্রায় সব ক্লাব চায় চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের নিয়ে লিগ পরিচালনা করতে। কিন্তু কতিপয় ক্লাব দলবদলের বাজারে ক্রিকেটারদের মাথা বিগড়ে দিচ্ছে। যে কারনে ক্রিকেটাররা অসম অর্থ দাবি করে বসে। গতকাল একাধিক ক্লাব কর্মকর্তা বললেন যেহেতু চট্টগ্রামে মানসম্মত ক্রিকেটারের সংখ্যা সীমিত তাই এখন উচিত সবাই মিলে চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের কিভাবে গড়ে তোলা যায় সে চিন্তা করা। কিন্তু কতিপয় ক্লাব কর্মকর্তা সেটা না করে ক্রিকেটারদের চড়া মূল্য হাঁকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। একাধিক ক্লাব কর্মকর্তা বলেন যে সব ক্রিকেটার অসম টাকা দাবি করছে তাদের সংখ্যা মোটেও বেশি নয়। তাদের কারনে সাধারণ ক্রিকেটাররা যারা খেলতে চায়, নিজেকে গড়ে তুলতে চায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামের ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে-তেমনটাই মনে করেন অনেক ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তা। বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা বলছেন যারা এধরনের চড়া মূল্য হাঁকাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে তরুনদের নিয়ে দল গঠন করে লিগে খেলা উচিত। আর সেটা করতে পারলে দুই থেকে তিন বছরে অনেকটাই এগিয়ে যাবে চট্টগ্রামের ক্রিকেট। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে মানসম্মত ক্রিকেটার।
উদাহরণ টেনে অনেক ক্লাব কর্মকর্তা বলেছেন একটা সময় যখন নান্নু, আকরাম, কিংবা আজম ইকবাল, নাজিম, আফতাবরা খেলতেন তখন তারা ঢাকায় যে অর্থ পেতেন চট্টগ্রামে তার চাইতেও অনেক কম অর্থ দিয়ে খেলতেন। কিন্তু এখন হয়ে গেছে উল্টো। ঢাকা গিয়ে খেলে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিভাগে কিন্তু চট্টগ্রামে এসে চায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্রিকেটারের চাইতে বেশি। আবার কোন কোন ক্লাব কর্মকর্তা তাদের সে আবদার মেনে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ বেশিরভাগ ক্লাব কর্মকর্তার। আর তাতেই ক্লাবগুলো ঢাকার ক্রিকেটার খেলানোর দিকে ঝুঁকছে।
তাই এসব অসম দাম হাঁকানো ক্রিকেটারদের বয়কট করার দাবি বেশ কিছু ক্লাব কর্মকর্তাদের। কিন্তু সবগুলো ক্লাব সেখানে এক হতে পারে না। চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়াটা যেমন এককভাবে সংগঠকদের দায়িত্ব না তেমনি এককভাবে ক্রিকেটারদেরও না। এখানে দু’পক্ষেরই সমান দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে ? দু’পক্ষের সমঝোতায় অন্তত তিন চার বছর খেলতে পারলে অনেক ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে চট্টগ্রাম থেকে।