লঞ্চ মালিকসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

অবহেলা ছিল, দ্রুত তীরে ভেড়ানো হলে এত মৃত্যু হতো না

| সোমবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় মালিকের ও মাস্টার-ড্রাইভারের অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকার নৌ আদালতে মামলা করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। সেই মামলার প্রেক্ষিতে লঞ্চের অন্যতম মালিক হামজালাল শেখসহ আটজনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন নৌ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ জয়নাব বেগম। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল মতিঝিলের নৌ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। খবর বিডিনিউজের।
লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, শামীম আহমেদ, রাসেল আহমেদ, ফেরদৌস হাসান এবং মাস্টার ইনচার্জ রিয়াজ আহমেদ, মাস্টার খলিলুর রহমান, ড্রাইভার ইনচার্জ মাছুম বিল্লাহ ও ড্রাইভার আবুল কালাম।
এদিকে সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে তৃতীয় দিনের তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে নতুন করে কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি। এখনও অনেকে স্বজনদের খোঁজে ভিড় করছেন নদী তীরে। তাদের দাবি, এখনও প্রায় অর্ধশত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
মামলার বাদী শফিকুর রহমান বলেন, ওই লঞ্চের মালিক কাগজে কলমে পেয়েছি হামজালাল শেখসহ মোট চারজন। তাই তাদেরকেও এ মামলায় আনা হয়েছে। মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, লঞ্চে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তৈলাক্ত কোনো পদার্থ ছিল, যার কারণে আগুনের এত ভয়াবহতা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও যথেষ্ট ছিল না। আপাতত অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইনের ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারায় মামলা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রাথমিক তদন্ত দেখে করা হয়েছে। তদন্তে আরও গুরুতর প্রমাণ পাওয়া গেলে আরও মামলা করা হবে।
ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর আগুনে পুড়ে যায় অভিযান-১০। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আহত হয়ে ৮০ জনের বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানা এলাকা অতিক্রম করার পর ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরপরই আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুরো নৌযানটি আগুনে পুড়ে যায়। সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রও ছিল না। পর্যপ্ত বালির বাঙ ও বালতি ছিল না। ইঞ্জিন রুমের বাইরে অননুমোদিত অনেকগুলো ডিজেল বোঝাই ড্রাম এবং রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ছিল, যা নিয়মের পরিপন্থি।
নৌ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের নৌ কর্মকর্তা বেল্লাল হোসাইন বলেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।
ওই ঘটনায় পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন শনিবার ঝালকাঠি সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির গতকাল ২৫ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করলে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। ওই মামলাতেও লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে আসামি করা হয়েছে।
দ্রুত তীরে ভেড়ানো হলে এত মৃত্যু হতো না : লঞ্চে আগুন লাগার পর দ্রুত তীরে ভেড়ানো হলে এত মৃত্যু এড়ানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। গতকাল ঘটনাস্থল এবং পুড়ে যাওয়া লঞ্চটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তিনতলা ওই লঞ্চের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও কার্যকর ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তাদের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। পুরো তদন্ত শেষ করতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতে নদীর ভেতরে কোনো নৌযানে আগুন লাগলে তা নেভানো সহজ হওয়ার কথা, যদি ফায়ার পাম্প ও হোসপাইপের ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু অভিযান-১০ লঞ্চের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।
বরিশাল নৌযানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাহারুল আমীন বলেন, লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ঢাকা-বরিশাল রুটের সব লঞ্চেই উপরে বিলাসবহুল ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু ইঞ্জিন রুমে নিরাপত্তার জন্য কিছুই থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দমুখর ভোট হয়েছে : ইসি সচিব
পরবর্তী নিবন্ধআজ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী