ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার ফলে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। একদিনের এ বৃষ্টির কারণে রবি মৌসুম ৮-১০ দিন পিছিয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তম্মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশের মতো কাটা হয়ে গেছে। যেগুলো মাঠে রয়েছে, অসময়ের এ বৃষ্টিতে সেগুলোর কিছু ক্ষতি হতে পারে। যেসব ধান কাটা হয়নি, সেগুলো নেতিয়ে পড়তে পারে। আবার পাকা হওয়ায় এসব ধানের ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশে শীতকালীন সবজির আবাদ বেশি হয়। আলু, সরিষা, বাদামের চাষ হয় এ এলাকাতে। শুধু সাতকানিয়াতেই ১৫শ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, শুধু সাতকানিয়াতেই প্রায় ১১শ হেক্টর আলুর আবাদ হয়। ইতোমধ্যে ৮-৯শ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছে। যেগুলো নতুন লাগানো হয়েছে, বৃষ্টির পানিতে সেগুলোর বীজ পচে যেতে পারে। আবার সরিষা ও বাদামের ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ বৃষ্টিতে।
ফটিকছড়িতে বেশি আকারে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, মানুষ যেমন দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে গায়ে এন্টিসেপটিক দেন, ঠিক সেভাবে গাছের চারাতে আঘাত লাগতে এন্টিসেপটিক ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ছোট চারা গাছে, বিশেষ করে এক দুই ইঞ্চির চারাতে বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত লাগে এবং জমির বালি চারা গায়ে আঁচড়ে পড়ে। বৃষ্টির পরের দিন কৃষক যদি এন্টিসেফটিক হিসেবে ‘কার্বেন্ডাজিন’ গ্রুপের ওষুধ এক লিটার পানিতে এক গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করেন তাহলে আঘাতপ্রাপ্ত চারাগুলোতে পচন ধরবে না। এতে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে আসবে।
হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে আমন ধান কাটা ও মৌসুমি তরিতরকারি আবাদের এই মৌসুমে অকাল বর্ষনের কারণে কৃষিজীবি পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পূর্বে যেসব কৃষক আমন ধান কেটে উঠানে এনে মাড়াইয়ের জন্য গাদা মেরে রেখেছে সেসব ধানে গেজ এসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছিপাতলীর মো. লোকমান নামে এক কৃষক জানান, অকাল বৃষ্টির কারণে তার জমিতে কাটা ধান জমিতে রয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ধান জমিতেই হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। একই এলাকার মেম্বার রুপেন কুমার শীল জানান, তিনি মৌসুমী তরিতরকারি লাগানোর জন্য জমি তৈরি করে রেখেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পানি জমে গেছে। ফলে চাষাবাদ বিলম্ব হয়ে যাবে।
মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাই উপজেলার অনেক প্রান্তিক চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে। পূর্ব খৈয়াছরা গ্রামের প্রান্তিক স্ট্রবেরীচাষি জাহেদুল আলম বলেন, ডিসেম্বর মাসে এমন অনাকাঙ্খিত বর্ষণে আমার স্ট্রবেরী প্রজেক্ট এখন পানির নিচে। উপযুক্ত ও অনুকূল জমি না পাওয়ায় এবং শীতকালে বৃষ্টির আবির্ভাব থাকে না বলে বাড়ির পাশে নিচু জমিকে স্ট্রবেরী চাষের জন্য বেছে নিয়েছি। এখন আমার আর কিছুই রইলো না। আমবাড়িয়া গ্রামের ফুলকপি চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চারা কপিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে মাত্র। এরমধ্যে দিনভর বৃষ্টিতে জমিতে জমে গেছে পানি। রাতেও যদি বৃষ্টি হয় আর রক্ষা নাই।
মহেশখালী : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীর সমতল ভূমিতে চাষাবাদ করা বেশকিছু মৌসুমি পানের বরজ বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে মৌসুমি পান চাষিরা। ফলে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান তারা। মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের জামাল পাড়া গ্রামের পানচাষি আলহাজ্ব নুরুল আমিন বাবুল জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে ১৫০ ভার পান বরজ করেছেন। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতো তার খরচ হয়। মহেশখালীতে তার মতো আরো শত শত সৌখিন পানচাষি রয়েছে যারা তার মতো মোটা অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করে পান চাষ করে থাকেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তারা।