শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের (২০২১ সালের) এইচএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস পর ভিন্ন আঙ্গিকে এবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসএসসির মতো এইচএসসিতেও সবকয়টি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না এবার। গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৬টি পত্রের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মানবন্টন ও সময়ের ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। অন্যান্য বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং ও জেএসসি-এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। গতকাল সকালে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্র আর বিকালে মানবিকের খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ের ১ম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রথম দিনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৩৩৫ জন। এর মাঝে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২০ হাজার ১০৪ জন। বাকি ২৩১ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সকালের পরীক্ষায় কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও বহিষ্কারের কোন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ। এছাড়া সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অবশ্য বিকালের খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ের পরীক্ষায় ৯ জন পরীক্ষার্থীর শতভাগ অংশ নিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের একটি মাত্র কেন্দ্রে (ডা. ফজলুল হাজেরা কলেজ) এ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরাই এ বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
এদিকে, এবারের পরীক্ষায় মানবন্টন, সময় ও শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। সবকয়টি বিষয়ের পরিবর্তে মাত্র তিনটি বিষয়ের ৬টি পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। কমেছে পূর্নমান। একই সাথে কমানো হয়েছে সময়ও। এবার দেড় ঘন্টার পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। এছাড়া তত্ত্বীয় ও এমসিকিউ পরীক্ষার মাঝখানে এবার কোন বিরতি রাখা হয়নি।
তবে সময় ও মানবন্টনে পরিবর্তন আনা হলেও প্রশ্নপত্রে নির্দেশনা থাকছে আগের নিয়মেই। বিভ্রান্তি এড়াতে এইচএসসি প্রশ্নপত্রের নির্দেশনায় যা-ই লেখা থাকুক, পরীক্ষার্থীদের নম্বর ও সময় বিভাজন নিয়ে নতুন নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রনালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। এ জন্য সময় থাকবে ১৫ মিনিট। তত্ত্বীয় (সৃজনশীল) অংশে আটটি প্রশ্নের মধ্যে দুটির উত্তর দিতে হবে। সময় সোয়া এক ঘণ্টা। দুটি অংশ মিলিয়ে একটি বিষয়ে দেড় ঘন্টা সময় পাবে শিক্ষার্থীরা।
আর মানবিক ও ব্যবসায় শাখার পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ ৩০টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। এ জন্য সময় ১৫ মিনিট। আর তত্ত্বীয় ১১টি প্রশ্নের মধ্য থেকে উত্তর দিতে হবে ৩টির। এর জন্য সময় বরাদ্দ সোয়া এক ঘণ্টা। দুটি অংশ (তত্ত্বীয় ও এমসিকিউ) মিলিয়ে পরীক্ষার মোট সময় দেড় ঘন্টা। পরীক্ষা শুরুর আগে এসব নির্দেশনা পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই অবহিত করতে হবে। কক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়গুলো পরীক্ষার্থীদের স্পষ্ট করবেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসও করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিধি মেনে। এক বেঞ্চে একজন পরীক্ষার্থীকে বসিয়ে আগের ও পরের বেঞ্চ খালি রাখা হয়েছে। তবে হলের ভিতরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসলেও কেন্দ্রের বাইরে বরাবরের মতোই জটলা ছিল অভিভাবকদের। এদিকে, পরীক্ষার প্রথমদিন নগরীর বেশকয়টি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী, সচিব প্রফেসর আব্দুল আলীম, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ, বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ। পরিদর্শনে পরীক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসন ও বোর্ড কর্মকর্তারা। উল্ল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ১ লাখ ১ হাজার ১০২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে এবারের পরীক্ষায়। এর মধ্যে ছাত্র অংশ নিচ্ছে ৪৯ হাজার ৯৮১ জন। আর ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১ হাজার ১২১ জন। ২৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১১২টি কেন্দ্রে এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।












