মানবসেবায় স্বর্ণপদক পাওয়ায় লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজুকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ক্লাবের হলরুমে লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত দুজনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) দুজন কীর্তিমান মানুষকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজন হলেন লায়ন কামরুন মালেক। তিনি শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের নারী জাতির গর্ব। যাকে অনেক অভিধায় ভূষিত করা যায়। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি সম্ভ্রান্ত ঘরের বধূ হয়েও নারী জাগরণের কাজে নেমে পড়েছিলেন। তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন নিজের ঘর থেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। আমি শুনে সেদিন অবাক হয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, তাকে বেগম রোকেয়ার সাথে তার তুলনা করা যায়। শুধু তাই নয়, লায়ন কামরুন মালেক আমাদের কাছে নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদার প্রতীক। নারী আর কতদিন ঘরে বসে কাঁদবে। আর কতদিন পেছনে পড়ে থাকবে। তিনি দেখিয়ে দিলেন একজন নারী চাইলে সব পারে। চট্টগ্রাম জেলায় আর কোনো নারী গভর্নর আসেননি। সংবর্ধিত আরেকজন কীর্তিমান হলেন মনজুর আলম মনজু। তিনিও সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় তাকেও সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছে। আশা করি, তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে ক্রিকেট আরো সমৃদ্ধ হবে।
সংবর্ধিত অতিথি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক বলেন, আপনারা আমাকে এত এত সম্মাননা দিচ্ছেন, এই ঋণ আমি কীভাবে শোধ করি। আমি লায়নিজমে এসেছি আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে। তখন অনেক লিওর জন্ম হয়নি। এমনকি অনেক লায়নেরও জন্ম হয়নি। আমি জানি না কেমনে এই লায়নিজমে জড়িয়ে গেলাম। আমি কোনোদিন ভাবিনি একদিন গভর্নর হবো, কিন্তু হয়ে গেলাম। এসবের কৃতিত্ব জেলার ২ হাজার ৮০০ লায়ন্স ও লিওর। এছাড়া অনেক সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
সংবর্ধিত অতিথি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজু বলেন, আপনাদের ভালোবাসার কাছে আমি আজীবন ঋণী। আমি ছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে অনেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু আমাকে আপনারা সংবর্ধনা দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকটি পরাজয়ের ইতিহাস যুক্ত হয়েছে। তবে এখানে লজ্জার কিছুই নেই। আমরা আশা করি, কোনো না কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াব। একটি খারাপ সময় যেতে পারে। একটি কিংবা দুটি জয় আসলে আপনারা দেখবেন, সবকিছু ভালোভাবে যাবে। তখন আপনারাই বলবেন- ক্রিকেট হচ্ছে একটি মাধ্যম যা পুরো দেশ এক করে দিতে পারে। এই ক্রিকেট আমাদের আস্থার জায়গা, অহংকারের জায়গা। আমাদের খারাপ সময়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে অনেক পরিকল্পনা করছি। এখন আমার আপনার বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই। এখন আমাদের পাইপলাইনে খেলোয়াড় নেই। খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমানে যারা ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের সিংহভাগই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসেছে। শহরের কয়জন জাতীয় দলে খেলছে। তাই আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের প্রথম বোর্ড সভায় তাই ঘরোয়া ক্রিকেটের মান উন্নয়নে কথা বলেছি।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, যখন অতি খিদা লাগে তখন কুকুর বলেন বা মানুষ বলেন সব কিন্তু এক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমরা দুজনই যদি শেয়ার করে থাকতে পারি বা খেতে পারি, সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যারিটি। আজকের সংবর্ধিত দুইজন তাঁদের কর্মগুণে আরো উপরে যাক, এটা প্রত্যাশা করি। আরেকটি কথা হলো-এখন থেকে আমরা বেশি বড় কাজ করবো না। ছোট কাজ করবো। আপনারা অনেকে অপ্রয়োজনে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। এটা কিন্তু সামান্য একটি সুইচের ব্যাপার। সেটি আমার বাবার কাছ থেকে দেখেছি। তিনি বলেছেন-তুমি তোমার লাইটটা যদি অফ রাখো, তাহলে আরেকজন তোমার লাইটটা ব্যবহার করতে পারবে। এতে দ্বিগুণ লাভ। একদিকে আপনার বিদ্যুৎ বিল কম হবে। আবার আপনি আরেকজনকে বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য সাহায্য করছেন।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া বলেছেন, লায়নিজমে কারো কিছু পাওয়ার নাই। এখানে সবাই সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে আসেন। সবাই মিলে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানোই লায়নিজম। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক দান করতে পারি, সেটি কখনও সমষ্টিগত দানের মতো হবে না।
বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগং এর প্রেসিডেন্ট আবদুর রব শাহীন। বক্তব্য রাখেন লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর মোসলেহ উদ্দিন খান, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন রফিক আহমেদ, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন নজমুল হক চৌধুরী, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন এসএম শামসুদ্দিন, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন এসএম ফারুক ও গ্লোবাল সার্ভিস টিমের (জিএসটি) কো-অর্ডিনেটর লায়ন জি কে লালা। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, সংবর্ধনা উদযাপন কমিটির চেয়ারপার্সন লায়ন রাজীব সিংহ, লায়ন আবু নাসের রনি, লায়ন সোহেল খান, লায়ন ডা. গোপাল ভট্টাচার্য্য, লায়ন ডা. মেসবাহ উদ্দিন তুহিন, লায়ন তপন কান্তি দত্ত, লায়ন বাবুল কান্তি লালা, লায়ন রেবেকা নাসরিন, লায়ন নিশাত ইমরান, লায়ন নাসরিন আকতার, লিও শাহরিয়ার কবির, লিও শাহদাত হোসেন সাইফ ও লিও রাহুল লালা।
