বাংলাদেশের শুরু আর শেষ এক হলো না। তৃতীয় দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল আনন্দে ভরা। শেষটা এলো বিষাদ নিয়ে। আবারও টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। আরেকটি ব্যাটিং বিপর্যয়। আরেকবার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর লড়াই। তাইজুল ইসলাম ও অন্য বোলারদের মাধ্যমে পাওয়া উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেল হতাশাজনক ব্যাটিংয়ে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে লিড নেওয়ার বেশ আগেই থামিয়ে দিয়ে প্রশংসিত বাংলাদেশ বিকেলে এসে অস্বস্তিতে ভুগেছে। কারণ দিনের শেষ ভাগে অল্প রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। গতকাল রোববার সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস ২৮৬ রানেই গুটিয়ে দিয়ে পাওয়া টাইগারদের ৪৪ রানের লিড দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৩ রানে। ১২ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন মুশফিক, ৮ রানে ব্যাট করছিলেন ইয়াসির আলী।
৪৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ধীরেসুস্থে শুরু করলেও ওপেনার সাদমান বিদায় নেন পঞ্চম ওভারেই। লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবশ্য রিভিও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এই ওপেনার রান করেছেন মাত্র ১। এক বল পরেই তিনে নামা শান্ত বাইরের বল ছোঁয়াতে গিয়ে স্লিপে থাকা আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ডাক মারেন। পরের ওভারে হাসান আলীর শেষ বলে ঘুরিয়ে খেলতে গেলে মোমিনুলের ব্যাটের কানায় লেগে মিডউইকেটে থাকা আজহার আলীর হাতে ক্যাচ চলে যায়। বাংলাদেশ অধিনায়কও কোন রান যোগ করতে পারেননি।
পানি পানের বিরতির ঠিক পরেই বিদায় নেন অপর ওপেনার সাইফ। শাহিন আফ্রিদির শর্ট বলে মুখ বাঁচাতে হাত বাড়িয়ে দেন সাইফ, কিন্তু বল তার ব্যাটের উপরের অংশে লেগে উপরে উঠে যায়, নিজেই ক্যাচ ধরেন শাহিন। সাইফ বিদায়ের আগে করেন ১৮ রান। সাইফ ফেরার পর উইকেটে আসেন ইয়াসির। দ্বিতীয় ইনিংসেই ছয়ে নামেন ইয়াসির। তবে এর পেছনে লিটন দাসের ক্লান্তি ভূমিকা রেখেছে। ১১৫ ওভার উইকেটের পেছনে থাকার কারণেই তাকে এত দ্রুত ব্যাটিংয়ে নামায়নি বাংলাদেশ। ইয়াসিরকে একটু নড়বড়ে মনে হলেও দাঁতে দাঁত চেপে মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে শেষ পর্যন্ত দিন পার করে দিয়েছেন। পঞ্চম উইকেটে ইয়াসির আলী রাব্বি ও মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১৪ রানের জুটি গড়েন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রতিটি দিনেই প্রথম সেশনে উইকেট পতনের যে ধারাবাহিকতা, সেটা ঠেকানোই এখন মুশফিক এবং ইয়াসিরের চতুর্থ দিনের প্রধান এবং একমাত্র দায়িত্ব।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান করা পাকিস্তান তৃতীয় দিনের শুরুতেই এক রান যোগ করতে দুই উইকেট হারায়। ওভারের পঞ্চম বলে তাইজুলের বলে এলবির শিকার হন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। তিনি ১৬৬ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রান করেন। পরের বলেই নতুন ব্যাটার অভিজ্ঞ আজহার আলীকে মাঠ ছাড়া করেন তাইজুল। এই ডানহাতিকে শূন্য রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন টাইগার স্পিনার। এরপর ব্যাট করতে নামা বাবর আজমকে সরাসরি বোল্ড করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ক ৪৬ বলে ১০ রান করেন। অন্যপ্রান্তে অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন আবিদ। বাবর ফেরার পর ব্যাট করতে নামা ফাওয়াদ আলমকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তাইজুল। প্রতিপক্ষের ১৮২ রানের মাথায় এই বাঁহাতিকে উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন এই স্পিনার। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফেরান এবাদত হোসেন। ডানহাতি এই পেসারের ইনসুইং বুঝতে না পেরে এলবি হন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার (৫)। শতক হাঁকানো আবিদকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন তাইজুল। পাকিস্তানি ওপেনার ২৮২ বলে ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৩ রান করে বিদায় নেন। এরপর হাসান আলীকে ১২ রানে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তাইজুল। পাকিস্তানি ব্যাটার সাজিদ খানকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান এবাদত। নুমান আলীকে (৮) ফিরিয়ে ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন তাইজুল। এরপর ফাহিম আশরাফকে (৩৮) ফিরিয়ে নিজের সপ্তম উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। সব মিলিয়ে বলা যায় চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটা ছিল বোলারদেরই। দুই দলের বোলাররা মিলে তুলে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, ৭৭ ওভার ৪ বলে রান উঠেছে মাত্র ১৮০। ইনিংসের ১৯তম ওভারের পর আলো কমে আসার কারণে আম্পায়াররা আর খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব মনে করেননি। এতেই শেষ হয় চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন।