যেমন হলো ভোট

বেশিরভাগ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ, রাঙ্গুনিয়ায় ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি, পেকুয়ায় ভাঙচুর

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

তৃতীয় ধাপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫৪ ইউনিয়নে গতকাল রোববার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া হাটহাজারীর ১৩ ইউনিয়নে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ায় ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। চকরিয়ার ১০ ইউনিয়ন ও রাঙামাটির কাউখালীর ৪টি ও কাপ্তাইয়ের একটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়। পেকুয়ায় বারবাকিয়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও গোলাগুলির পর কেন্দ্রটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১৯ জন আহত হয়েছেন।
হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারী উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে গতকাল নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত সম্পন্ন হয়েছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও কয়েকটি কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ভোটারদের ছিল দীর্ঘ লাইন। সকালে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
৬ নং ছিপাতলী ইউনিয়নের গাউছিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন জানান, নির্বাচন চলাকালে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৫ মিনিটের মতো ভোট বন্ধ করা হয়। ৯ নং গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের গড়দুয়ারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। ১২ নং চিকনদন্ডী ইউপিতে হাত পাখা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাবেদ আহত হয়েছেন। ২ নং ধলই ইউপিতে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
১৩ নং দক্ষিণ মাদার্শা ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী নুরুল আমিন ও মো. ইউছুপের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। ১১ নং ফতেপুর ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডে এক ভোটার সম্ভু চৌধুরী আহত হয়েছেন।
রাঙ্গুনিয়ায় ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ফাঁকা গুলি
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা, প্রার্থী-সমর্থকদের মারধর ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে গতকাল ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউপি সদস্যদের কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটলেও চেয়ারম্যান প্রার্থী কিংবা সমর্থকদের কেন্দ্র করে কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জানা গেছে, চন্দ্রঘোনা-কদমতলী কেন্দ্রে সকাল ১১টার দিকে ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী রাশেদ আলী ও হাবীবুর রহমানের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই সময়ে ওই ইউনিয়নের চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থী আবুল হকের ছেলে মো. আরাফাত (২৫) আহত হন।
দুপুর দেড়টার দিকে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড রাজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী আজিম উদ্দিন ও ইউনুস মিয়ার কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। এ সময় এক প্রার্থীর লোকজন বুথের টেবিলে থাকা ব্যালট ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ দশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে প্রার্থীর লোকজন পালিয়ে যায়। ওই কেন্দ্রে ৩০ মিনিট ভোট বন্ধ ছিল।
লালানগর, কোদালা ও পোমরা ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল থেকে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী জানান, কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংসতা হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বিনা ভোটে ৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি ৫ ইউনিয়ন বেতাগী, হোছনাবাদ, লালানগর, দক্ষিণ রাজানগর ও ইসলামপুরে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়।
কাপ্তাইয়ে এক ইউপিতে ভোট
কাপ্তাই প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ইউনিয়নে ১১ নভেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে ১৬ অক্টোবর চেয়ারম্যান প্রার্থী নেথোয়াই মারমা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। পরে নির্বাচন কমিশন ওই ইউনিয়নের নির্বাচন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর পুনঃনির্ধারণ করে। এখানে নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান কাপ্তাইয়ের ইউএনও মুনতাসির জাহান।
চকরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ভোট
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে কঙবাজারের চকরিয়ার ১০ ইউনিয়নে। গতকাল সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের দীর্ঘ লাইন ছিল। কোথাও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। একটি ইউনিয়নে কেন্দ্রের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে এক প্রার্থীর চারজন কর্মীসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ২০ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে গতকাল ভোট হয় ১০ ইউনিয়নে। সেগুলো হলো কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও কোনাখালী ইউনিয়ন।
পেকুয়ায় কেন্দ্র ভাঙচুর, ভোট স্থগিত
পেকুয়া প্রতিনিধি জানান, পেকুয়ার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে সুষ্ঠু ভোট হলেও বারবাকিয়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও গোলাগুলির ঘটনার পর ফাঁসিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি স্থগিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। তাই বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সকাল ১১টার দিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ফাঁসিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন ১০০-১২০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে ওই কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ৩টি বুথ ও ব্যালট বাঙে ভাঙচুর চালায়। এ সময় ৫ শতাধিক কাস্টিং ভোটের ব্যালট হামলাকারীরা নিয়ে যায় এবং বাকি ব্যালটগুলো ছিঁড়ে ফেলে। পরে র‌্যাব, বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ঘোষণা করেন।
দীঘিনালায় সহিংসতায় আহত ১৯
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ৩ ইউনিয়ন এবং মহালছড়ির ৪ ইউনিয়নে গতকাল ভোট হয়েছে। দীঘিনালায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১৯ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার কবাখালি, বোয়ালখালি ও মেরুং ইউনিয়নে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মেম্বার ও চেয়ারম্যান প্রাথীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কবাখালি ইউনিয়নে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেটের গাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। আহতদের দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বাঁচা মেরুং কেন্দ্রে ব্যালট ছিনিয়ে নিলে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘাতে ভোট স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় ফুটবল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী মো. হোসেনের সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। প্রায় ২ ঘণ্টা ভোট স্থগিত করা হয়। হাজাধন কার্বারী পাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই কেন্দ্রে আহত হন ১৩ জন।
দুপুর ১২টায় কবাখালি ইউনিয়নের হাচিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা করে দুর্বৃত্তরা ব্যালট ছিনতাই করে। এ সময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ও পুলিশের গাড়িতে হামলা করা হয়। ছিনতাই হওয়া ১৮০ ভোট বাতিল ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার নূরেআলম সিদ্দিকী।
দীঘিনালায় মেরুং ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদা বেগম লাকির ওপর হামলা করেছেন রসিকনগর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী নাজমুল হোসেন তারার বড় ভাই ছমির হোসেন। আহত লাকিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ ভর্তি করা হয়।
কাউখালীতে শান্তিপূর্ণ ভোট
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, কাউখালী উপজেলার চার ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে গোলযোগের খবর পাওয়া না গেলেও দুর্গম ফটিকছড়ি ইউনিয়নের বামাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন চাকমার পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী লাথোয়াই মারমা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেয়ারম্যান হলেন প্রয়াত নোবেলের স্ত্রী ফারহানা
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাগ্নেকে পিটিয়ে হত্যা