যে কোনো উপায়ে মশার উপদ্রব বন্ধ করতে হবে

| শনিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নগরে হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব। বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের হম্বিতম্বি সব আয়োজনকে পায়ে মাড়িয়ে, সব ওষুধকে ‘তুচ্ছাতিতুচ্ছ’ করে মশারা উপদ্রব বাড়িয়ে চলেছে, নাজেহাল করে ছাড়ছে নগরবাসীকে। দিন নেই, রাত নেই, মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী খাবি খাচ্ছে। ইদানীং এতো বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেলো, যেন অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
দৈনিক আজাদীতে গত ২৫ নভেম্বর “মশক নিধনে ‘কার্যকর’ ওষুধের সংকট” শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মশক নিধনে ‘কার্যকর’ কীটনাশক সংগ্রহে গত নয় মাসে তিন দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে এ সময়ে কোনো কীটনাশক সংগ্রহ করে নি সংস্থাটি। ফলে বর্তমানে কীটনাশকের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য মাঝখানে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য দুই ধরনের ১১শ লিটার এডাল্টিসাইট (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) কীটনাশক সংগ্রহ করেছিল। নিয়মিত ব্যবহার করলে তা এতদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এ অবস্থায় নগরে মশার উপদ্রব বাড়লেও কীটনাশক সংকট থাকায় জোরালো হচ্ছে না মশক নিধন কার্যক্রম।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লিকুইড এডাল্টিসাইট (ল্যামডাসাইহ্যালোথিন ও ডেল্টামেথ্রিন) পিএইচপি ৬৯৯ এবং ‘এম ফস ২০ ইসি (ক্লোরপাইরিফস) নামে লার্ভিসাইড মজুদ আছে। যা কেনা হয়েছিল সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ওষুধ দুটি ‘অকার্যকর’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরপরও কীটনাশক দুটির ব্যবহার বন্ধ করেনি চসিক। এদিকে মশক নিধনে গত আগস্ট মাসে প্রণীত ‘জাতীয় গাইড লাইনে’ চসিকের জন্য ৩৪টি করণীয় নির্ধারণ করলেও তা অনুসরণ করছে না সংস্থাটি। এছাড়া চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির নির্দেশনাও অনুসরণ করছে না চসিক। ফলে দিন দিন নগরে বাড়ছে মশার উপদ্রব। বিশেষ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী ‘এডিস’ ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী ‘এনোফিলিস’ মশা বেড়েছে। গত ৭ জুলাই লালখান বাজারে মশা জরিপ করে সিভিল সার্জন অফিস। এতে ২০ শতাংশ বাসা-বাড়িতে মিলেছে এডিস। এছাড়া চবি গবেষক দল নগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটোই পাওয়া গেছে। তবে ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে।
মশক নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও এর সুফল যে নগরবাসী পাচ্ছে না; তা উক্ত সংবাদে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আগের মেয়রের আমলে কেনা ‘অকার্যকর’ কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ হয়নি কেবল তা নয়, কার্যকর ওষুধ না কিনে পরীক্ষায়-নিরীক্ষায় সময়ক্ষেপণও করা হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সমপ্রতি এডিস মশা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিউলেক্স মশার গুনগুন শব্দ আর কামড় নগরজুড়ে মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এডিস মশার মতো ভয়াবহ না হলেও এ মশার কামড়ে অনেক সময় গোদরোগ হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বড় হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া জরুরি। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, যে কোনো উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে। এমনকি অতীতের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কাও ওঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।
গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা। সভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, মশার ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে চসিককে। একইসঙ্গে ওয়ার্ড পর্যায়েও ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতি মাসে তার রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্থানীয় সরকার বিভাগে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নে চিঠিও দেয়া হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, বর্তমানে মশা সংক্রান্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক- যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে