কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। পরে অফিসের ভেতরে গুলিবিদ্ধ সোহেলসহ চারজনকে রেখে তারা বাইরে থেকে শাটারে তালা লাগিয়ে দেয়। স্থানীয়রা তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে। গতকাল মঙ্গলবার এমন বর্ণনা দেন ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মো. রাসেল। তার বাড়ি নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুরে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রাসেল জানান, গুলির শব্দ শুনে তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন কাউন্সিলর সোহেলকে অফিসে ঢুকে গুলি করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তারা মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল ছোড়ে। পরে তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও গুলি করে তারা। তার হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ১০ জন জানান, পাথুরিয়া পাড়ার জগন্নাথ মন্দির এলাকার তিন রাস্তার মাথায় অবস্থিত দোকান ঘরটিতে প্রথমে কাউন্সিলরকে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। তারা সবাই কালো পোশাক ও মুখোশ পরা ছিল। তখন আসর নামাজের জামাত হচ্ছিল। প্রথম দিকে র্যাবের লোকজন মনে করে কোনো প্রতিরোধ বা বিষয়টি নিয়ে ভাবার চেষ্টা করেননি কেউ। হঠাৎ গুলির শব্দ ভেসে আসে।
জানা যায়, কাউন্সিলর সোহেলের মাথায় গুলি করা হয়। এ সময় সহযোগী বাদল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও গুলি করা হয়। বাদল মারা যাওয়ার ভান করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পাশে থাকা হরিপদ ও আরও একজনকেও গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলি চলা অবস্থাতেই বাইরে থেকে শাটার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন রাস্তার তিন দিকে তিনজন ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি ভয়াবহ চিন্তা করে স্থানীয়রা ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এভাবে পঁয়তাল্লিশ মিনিট চলে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ও স্থানীয়দের নিরস্ত্র প্রতিরোধের চেষ্টা চলতে থাকে। এ সময় ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধ করতে যাওয়া আরও তিনজনকেও গুলি করে হামলাকারীরা। ৪৫ মিনিট পর হামলাকারীরা শাটার বন্ধ করে তালা দিয়ে বউবাজার এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তালা ভেঙে কাউন্সিলর সোহেলসহ চারজনকে উদ্ধার করে।
কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়াপাড়ায় সিমেন্টের দোকান থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে সোমবার বিকালে একদল মুখোশধারীর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তাতে ওই দোকানের মালিক ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল ও ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি হরিপদ সাহা নিহত হন। তাছাড়া গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন।
এদিকে কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দূরে অস্ত্র, গুলি ও হাতবোমাসহ নানা বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার কোতোয়ালি মডেল থানার সংরাইশ এলাকার রহিম ডাক্তারের গলি থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয় বলে ওই থানার ওসি আনওয়ারুল আজম জানান। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি এলজি, ১২ রাউন্ড গুলি, একটি দেশে তৈরি পাইপগান, ১৫/২০টি হাতবোমা, দুটি কালো পোশাক ও তিনটি ব্যাগ। সোমবার বিকালে সোহেলসহ দুজনকে হত্যায় এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
ওসি আনওয়ারুল আজম জানান, দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে ওই বাড়ির লোকজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে জানালে পুলিশ গিয়ে ওগুলো উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে এই অস্ত্র উদ্ধারের স্থানের দূরত্ব আনুমানিক ৫০০ মিটার।
কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার ঘটনাস্থল থেকে জানান, ঢাকা থেকে ‘বম্ব ডিস্পোজাল’ দল এসে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করবে।
জানাজায় হাজারো মানুষ : নিহত কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নিয়ে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। জেলা শহরের পাথুরিয়াপাড়া ঈদগাহে গতকাল বেলা ২টার দিকে জানাজা শেষে পাথুরিয়াপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গুলিতে আহতদের বরাতে সোহেলের ভাই সৈয়দ মো. রোমান বলেন, খুনিরা হেলমেট পরা ছিল। তারা এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই গুলি করে। পরে ককটেল ফাটিয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। আমার ভাইকে মেঝেতে শুইয়ে মাথায় ও বুকে নয়টি গুলি করে খুনিরা। সে সময় গুলিতে আরও চারজন আহত হন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করবেন। খুনি সম্পর্কে পুলিশ এখনও নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেনি।
জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, খুনি ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। খুব শিগগিরই তাদের ধরা হবে। কী কারণে এ ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতরা যে-ই হোক, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, স্থানীয়ভাবে বিরোধ ছিল। সন্ত্রাসীরা ঢুকে গুলি চালিয়েছে।












