এক মাসেও উদ্ধার হননি চকবাজারে অপহৃত রাজমিস্ত্রি পারভেজ আহমেদ। পারভেজের ভাই মামলার বাদী ছাদিকুর রহমানের অভিযোগ, মুক্তিপণ না পেয়ে তার ভাইকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় এক মাস আগে হওয়া মামলায় পুলিশ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও এখনো খোঁজ মিলেনি পারভেজের।
ছাদিকুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় আজাদী কার্যালয়ে প্রতিবেদককে জানান, মামলার পর চকবাজার থানা পুলিশকে অপহরণকারীদের মুক্তিপণ চাওয়ার ম্যাসেজ, মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ওই আসামি মুক্তিপণ না পেয়ে আমার ভাইকে হত্যা করে লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। কিন্তু প্রায় এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে, পুলিশ এখনো আমার ভাই কিংবা ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। বেশ কয়েক দিন ধরে মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) আমার ফোনও ধরছেন না। পারভেজ সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানাধীন রাজাপুর গ্রামের মো. সাইদ মিয়ার ছেলে।
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই মো. ফিরোজ আলম মুন্সীর মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে চকবাজার থানার ওসি মো. ফেরদৌস জাহানের অফিসিয়াল মোবাইলে ফোন করা হলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ওসি ছুটিতে রয়েছেন বলে জানানো হয়।
চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ওসি সাহেব ছুটিতে আছেন। ওই মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) ফিরোজ মুন্সীও ছুটিতে। যে কারণে হয়ত ফোন ধরছেন না। রাজমিস্ত্রি পারভেজ অপহরণ মামলায় সন্দিগ্ধ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
১৫ অক্টোবর চকবাজার থানায় রেকর্ড হওয়া মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার পর চকবাজার থানাধীন ডিসি রোডের আবু কলোনির ভাড়া বাসা হতে পারভেজ বের হয়ে আর ফিরেননি। তার হদিস না পেয়ে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন বড় ভাই ছাদিকুর। ছাদিকুরও পেশায় রাজমিস্ত্রি। এর মধ্যে ১১ অক্টোবর ০১৫৬৫০০১৮২৯ এবং পারভেজের ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭৩৩৯০৩৫৭৫ থেকে সিলেটে বসবাসরত পারভেজের বোনের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে এবং ফোন করে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা। পারভেজ অপহরণকারীদের হেফাজতে আছেন জানিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা বাদীর ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এনিয়ে ১৭ অক্টোবর আজাদীতে ‘হত্যা করে লাশ কর্ণফুলীতে! মুক্তিপণ না পেয়ে নৃশংসতা, গ্রেপ্তার এক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মামলার বাদী ছাদিকুর রহমান জানান, চকবাজার থানায় ১১ অক্টোবর ডায়েরি করার পর পুলিশ অফিসার এসআই ফিরোজ অপহরণকারীর সাথে বিকাশের দোকানদার সেজে বেশ কয়েকবার কথা বলেন। ১৫ অক্টোবর বিকেল তিনটার দিকে চকবাজার এলাকা থেকে ইলিয়াছ নামের এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারী পুলিশকে জানিয়েছে, কথা কাটাকাটি হওয়ায় তাকে (পারভেজ) মেরে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে ১৫ অক্টোবর দিনের বেলা সন্দিগ্ধ অপহরণকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তীতে রাতে রেকর্ড হওয়া মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। পরে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলেও মহানগর হাকিম আদালত একদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক গত রাতে আজাদীকে বলেন, ওই মামলার তদন্তভার গত ১৩ নভেম্বর থেকে গোয়েন্দা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, মামলাটির একটি কিনারা হবে। পারিবারিক অসুবিধার কারণে চকবাজার থানা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ছুটিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।