‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে/ কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে’।
– কবি সুনির্মল বসুর ‘ সবার আমি ছাত্র’ কবিতায় পুরো প্রকৃতিই যেন আমাদের গুরু। কবিতার সমগ্র অংশ জুড়েই শিক্ষা লাভ ও আদর্শের হাতছানি! প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘যিনি যথার্থ গুরু তিনি শিষ্যের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন এবং তার অন্তর্নিহিত সকল প্রচ্ছন্ন শক্তিকে ব্যক্ত করে তোলেন’। গুরু বলতে প্রথমেই বাবা- মা এবং এরপরই শিক্ষকের ছবি ভেসে উঠে। বাবা- মায়ের অতিরিক্ত আদর বা শাসন দুটোই সন্তানের জন্য অহিতকর। তবে অনেক বখে যাওয়া সন্তানও মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার নজির রয়েছে। সত্যি বলতে কখন যে কার শিক্ষা, কার আদর্শ আমাদের অবচেতন মনে ধারণ করে তা আমরা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারিনা।
আশৈশব যে শিশুকে প্রতিপালন করে স্কুলে পাঠাই সে শিশু কোনো না কোনো শিক্ষকের সান্নিধ্যে আনন্দ লাভ করে, পাঠে মনযোগী হয়। কখনো বা এমনও দেখা যায়, শিক্ষকই হয়ে উঠেন তার আদর্শ। পৃথিবীর সব একদিকে, অন্যদিকে শিক্ষকের প্রতি তার সম্মান ও একাগ্রতা। শিশুরা সহজাত ভাবে বাবা-মায়ের চেয়ে শিক্ষকের কথাকেই বেশি মূল্যবান মনে করে। হয়ত কিছু শিক্ষক এই ভেবে আনন্দ পান- অন্তত শিক্ষার্থীরা তার কথা শোনে, তাকে অনুসরণ করে। এতে যদি মঙ্গল হয়, তবে তাই হোক। আবার কিছু সংখ্যক মনে করেন, সারাদিন বাসায় বাবা, মা, গৃহ শিক্ষক সবাই রয়েছেন আমরা ক’য়েক ঘণ্টার জন্য কী আর করতে পারি? আপনাদের সন্তানের ভালো মন্দ আপনারাই দেখুন। বিষয়টি দু’দিক থেকেই বিবেচ্য। তবে সঠিক শিক্ষা যেখান থেকেই শিশু পেয়ে থাকে, সেখান থেকেই তার আদর্শের ভিত গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে কারো উপর একচেটিয়া দোষ দেয়া যায় না।
আমরা যাদেরকে আদর্শ মানছি, দেখা যায় তাদের অধিকাংশই বাবা-মায়ের অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তারা তাদের পথে এগিয়েছেন। এতে বাবা মায়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়নি বরং আদর্শ যদি সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যায় সেখানেই সার্থকতা। অতঃপর এটুকু বলতে পারি, সন্তান- বাবা-মা-শিক্ষক-শিক্ষা-আদর্শ একে অন্যের পরিপূরক। শুধু খেয়াল রাখতে হবে কোমলমতি সন্তানেরা যেন বিপথে না যায়! সে যেই আদর্শই ধারণ করুক না কেন তা যেন অদূর ভবিষ্যতে কল্যাণ বয়ে আনে। কেননা, আমরা সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাছে অঙ্গিকারবদ্ধ-‘আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে/ করে যাব আশীর্বাদ / এরপর হব ইতিহাস ’। লেখক : কবি, শিক্ষক