করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠেয় এ পরীক্ষায় মানবণ্টন, সময় ও শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আনা হয়েছে পরিবর্তন। সবকয়টি বিষয়ের পরিবর্তে গ্রুপ ভিত্তিক মাত্র তিনটি করে বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। কমেছে পূর্ণমান। একই সাথে কমানো হয়েছে সময়ও। এবার দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। এছাড়া তত্ত্বীয় ও এমসিকিউ পরীক্ষার মাঝখানে কোনো বিরতি রাখা হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- বিজ্ঞান বিভাগের সিকিউ (তত্ত্বীয়) অংশে ৮টি প্রশ্ন থেকে যে কোনো ২টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে শিক্ষার্থীদের। আর এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর করতে হবে ১২টি। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সিকিউ অংশের ১১টি প্রশ্নের মধ্যে যে কোনো ৩টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এ দুটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এমসিকিউ অংশে উত্তর করতে হবে ১৫টি প্রশ্নের।
তবে ভিন্ন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণে এসব পরিবর্তন আনা হলেও প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। বিশেষ করে সময় এবং কয়টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে, তা নিয়ে বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় পরীক্ষার হলে। প্রথম দিন (গতকাল) পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নপত্রে নির্দেশনা ছিল পুরনো নিয়মেই। সিকিউ অংশে ৮টি প্রশ্নের মাঝে ৫টির উত্তর করতে বলা হয় নির্দেশনায়। যদিও নতুন সিদ্ধান্তে ২টি প্রশ্নের উত্তর দিলেই চলবে শিক্ষার্থীদের। আর এমসিকিউ (বহু নির্বাচনী) অংশে ২৫টি প্রশ্নের সবকয়টির উত্তর করতে বলা হয়। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমসিকিউ অংশের ১২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় নিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয় শিক্ষার্থীদের। সিকিউ অংশে সময় উল্লেখ ছিল ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। অথচ সিকিউ ও এমসিকিউ মিলিয়ে দেড় ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করা হয় নতুন সিদ্ধান্তে। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় পরীক্ষার্থীদের। যদিও পরীক্ষার শুরুতে দায়িত্বরত পর্যবেক্ষকদের বিষয়টি স্পষ্ট করার নির্দেশনা ছিল। তবে কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার শুরুতে পর্যবেক্ষকরা বিষয়টি স্পষ্ট করলেও কোনো কোনো কেন্দ্রে তা করা হয়নি। পরে বিভ্রান্তি দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরত শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়। ওই সময় শিক্ষকরা বিষয়টি স্পষ্ট করেন। কিন্তু কোথাও কোথাও শিক্ষকরা নিজেরাও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলে শোনা গেছে। এ ধরনের বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ভালোই বেকায়দায় পড়তে হয়। প্রশ্নপ্রত্রের নির্দেশনা ঘিরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আজাদীকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় কয়েক মাস আগে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেই প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে যায়। নতুন করে আর প্রশ্ন ছাপা হয়নি। যার কারণে প্রশ্নপত্রে পুরনো প্যাটার্নে (নিয়মে) নির্দেশনাগুলো ছিল। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনাগুলো আমরা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দিয়েছি। কেন্দ্র সচিবদের বারে বারে জানিয়েছি। তাদের বলা হয়েছে, পরীক্ষার আগে পর্যবেক্ষকদের নিয়ে সভা করে যাতে এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়। কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে মতবিনিময় সভায়ও এ নিয়ে দফায় দফায় বলা হয়েছে। এরপরও দায়িত্বরত শিক্ষকরা যদি বিষয়টি স্পষ্ট করতে না পারেন, সেটি দুঃখজনক। তবে কোথাও বড় ধরনের জটিলতা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।