চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব দুর্ঘটনার শীর্ষে যেমন রয়েছে লেগুনা ও দূরপাল্লার বাস, মোটরবাইক, তেমনি রয়েছে সড়কের বিপজ্জনক বাঁক। সড়কে লেগুনা ও মোটরবাইকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, চালকদের অদক্ষতাসহ নানা কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। ফলে সড়কে থামছে না কান্নার রোল। বিশ্লেষকরা বলেন, আঁকা-বাঁকা সড়ক, অদক্ষ চালক, বিনা প্রয়োজনে ওভারটেক, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র গাড়ি থামানোসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও রোধ করা যাচ্ছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মহাসড়কের শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৫ কিলোমিটারে একশরও বেশি ঝঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এরমধ্যে শাহ আমানত সেতু থেকে দোহাজারীর ৪৫ কিলোমিটারে রয়েছে অর্ধশত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। আঁকা-বাঁকা হওয়ার কারণে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। এছাড়া এই একশ ৫৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে যাত্রীদের সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা। গত এক বছরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে কয়েক সড়ক দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। এসব হতাহতের বিষয়ে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। হতাহতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। কেননা সড়ক দুর্ঘটনার সব ঘটনায় মামলা হয় না। অধিকাংশ ছোটখাটো ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে আপোষ হওয়ার কারণে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে মহাসড়কটি যেন লাশের মিছিলে রূপ নিয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘বিপজ্জনক দুই পাশ/ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংস্কারের ফলে বাড়ছে উচ্চতা, দুর্ঘটনাও ঘটছে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংস্কারের ফলে ক্রমান্বয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মহাসড়কের একাধিক স্থানে মূল অংশের সাথে অসমান অংশের দূরত্ব বাড়ছে। ফলে মহাসড়কের দু’পাশের অসমান অংশ হয়ে উঠেছে বিপদজনক। প্রতিদিন ঘটছে একাধিক দুর্ঘটনা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মইজ্যারটেক থেকে লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকা পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখভাল করে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ভারী যানবাহন চলাচল ও বৃষ্টির কারণে প্রতিবছর মহাসড়কের সিংহভাগ অংশে সংস্কার প্রয়োজন হয়। এতে নতুন করে কার্পেটিংয়ের ফলে মহাসড়কের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের মূল অংশের সাথে অসমান অংশের দূরত্ব এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার অনেকস্থানে দূরত্ব আরো বেশি। মূল সড়কে ওঠা-নামার অসমান অংশই হয়ে উঠেছে বিপদজনক। এতে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ছোট যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। অনেক সময় মালবোঝাই ভারী যানবাহনও অসমান অংশের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়। গত কয়েকদিনে লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে মহাসড়কের দু’পাশ অসমান হওয়ায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার আহ্বায়ক মোজাহিদ হোছাইন সাগর জানান, এমনিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত না হওয়ায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে প্রতিবছর মহাসড়কের মূল অংশের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মহাসড়কের দু’পাশে অসমান অংশের দূরত্বও বাড়ছে। এতে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কের মূল অংশের সাথে দু’পাশের অসমান অংশ সমান করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সাড়ে আট বছরের বেশি সময় ধরে সমীক্ষার মধ্যে আটকে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ফোরলেইনে উন্নীতকরণের কাজ। সড়কে ৫০টির বেশি বাঁক এবং বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় দুই লেইনের এই মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ। বেড়েছে কয়েকগুণ পরিবহনের চাপ। সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে অচিরেই সমীক্ষা কাজ শেষ হলেই শুরু হবে ১৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক ফোর লেইনের সমপ্রসারণ কাজ।
দেশের ব্যস্ত মহাসড়কের মধ্যে একটি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক অন্যতম। প্রতিদিন হাজার গাড়ি চলাচল করে এ মহাসড়কে। কর্ণফুলী সেতুর পরে চার কিলোমিটার ফোরলেইনে নির্মিত হলেও চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক এখনও রয়েছে দুই লেইনে। এ সড়কে বাড়তি যানবাহনের চাপে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ থাকায় একশ ৫৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হয় যানজটও। সড়কটি ফোরলেইন হলে চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। বিশ্লেষকরা বলছেন নিরাপদ সড়ক বলতেই চারলেনের কোনো বিকল্প নেই।