নগর নিয়ে মেয়রের স্বপ্ন আর প্রচেষ্টা

আজাদীকে বললেন নানা পরিকল্পনার কথা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নগরের যেসব সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার বা পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল করে তার তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তালিকাভুক্ত সড়কগুলো দিয়ে বন্দরের জেটি থেকে আসা-যাওয়া করা ভারী যান থেকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক টোল আদায় এবং নষ্ট হয়ে গেলে বন্দরের অর্থায়নে সড়কগুলো সংস্কারে উদ্যোগ নিতে শীঘ্রই নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে বলে দৈনিক আজাদীর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে ঢাকায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র। ওই বৈঠকে মেয়রকে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ির কারণে নষ্ট সড়ক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে সংস্কার করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতেই আজ সোমবার চসিকের প্রকৌশল বিভাগকে সড়কের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র। ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যান মেয়র। গতকাল রোববার বিকালে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। কথা বলেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সাথেও বৈঠক করেন। এতে নগরবাসীর জীবনমান এবং নগরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত একাধিক প্রকল্পের অনুমোদনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরকে ঘিরে নিজের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল এবং নগর ঘিরে সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আজাদীকে বিস্তারিত তুলে ধরেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, পার্সোনাল যোগাযোগ না করলে অনেক সময় প্রকল্প বা প্রস্তাবনা পিছিয়ে থাকে। আমার ইচ্ছে, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আগামী বছরের মধ্যে দৃশ্যমান কিছু যেন করতে পারি। পরবর্তী সময়গুলোতেও আরো কিছু বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য আছে।
মেয়র বলেন, বন্দরের জেটি থেকে যেসব ট্রাক ও ভারী গাড়ি বের হবে সেগুলোর উপর টোল বসানো উচিত। কারণ টানেল এবং বে টার্মিনাল চালু হলে শহরে গাড়ির চাপ আরো বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত গাড়ির লোড নেওয়ার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন সড়ক তো আমাদের নাই। বর্তমানে যেসব সড়ক আছে সেগুলো হালকা গাড়ির চাপ সহ্য করার উপযোগী। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সড়ককে টেকসই করতে হবে। এজন্য অর্থ দরকার। তাই টোল বসানোর বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব।
খালি মাঠ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকার একটি স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি। তারা খালি মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের সার্ভে করছে। প্রায় প্রস্তুতও করে ফেলেছে। আমাকে প্রেজেন্টেশন দেবে। পরিত্যক্ত জায়গায় আমরা বিনোদন কেন্দ্র এবং খেলার মাঠ করে দেব। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। রেলওয়ের অনেক জায়গা আছে। বন্দরেরও আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলব। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব বড় মাঠ আছে সেগুলোরও সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলব। বাকলিয়া স্টেডিয়ামের জন্য প্রকল্প পাঠিয়ে দিয়েছি।
শহরের রিকশাকে শৃঙ্খলায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন রিকশার যে নম্বর প্লেট ব্যবহার করে সেটা করতে আমি আগ্রহী না। প্রকৌশল বিভাগ ও স্টেট শাখাকে বলে দিয়েছি বারকোড সিস্টেমের আওতায় আনার জন্য। বর্তমানে দেখা যায়, এক লাইসেন্স দিয়ে একাধিক রিকশা চলে। বারকোড হলে মোবাইল অ্যাপস দিয়ে যে কেউ যাচাই করে দেখতে পারবে লাইসেন্স সঠিক কিনা। সেখানে মালিকের নামসহ যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পতেঙ্গা-বাকলিয়াসহ কয়েকটি এলাকার ভেতরের রোডে এসব রিকশা চলে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়েও প্রদক্ষেপ নেব। সড়ক-ফুটপাত দখল হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, শহরে ভ্যানগাড়ি সড়ক দখল করে ফেলেছে। একদিকে আমরা তাদের তুলে দিই, অন্যদিকে তারা আবার বসায়। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা তো উচ্ছেদ করে আসছি, স্থানীয় থানা তাদের আর বসতে না দিলেই কিন্তু অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
সাবেক তিনজন মেয়র চেষ্টা করে নগর ভবন নির্মাণ করতে পারেননি। এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, এটা নিয়েও কাজ চলছে। বর্তমানে ভেটিং করা হচ্ছে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছি। তারাই ভেটিং করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মাসখানেকের মধ্যে এটা শেষ করে প্রকল্পটি একটি প্রক্রিয়ায় চলে আসবে। ইনশাল্লাহ, আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব।
মেয়র বলেন, শহরকে ঘিরে আমার নানা পরিকল্পনা আছে। কিন্তু ফান্ডের তো অভাব। যেমন চট্টগ্রাম শহরে সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধি করার জন্য কিছু উন্মুক্ত মঞ্চ করা দরকার। এর মধ্যে পতেঙ্গা এলাকায় করা যায়। এক নম্বর ও দুই নম্বর ওয়ার্ডও পিছিয়ে থাকা এলাকা। সেখানেও করা যায়। বর্তমানে সাংস্কৃতিক চর্চার সব সুযোগ-সুবিধা তো মূল শহরে। কিন্তু পুরো শহরে সুবিধা থাকা উচিত। সারা শহরে উন্মুক্ত মঞ্চ করে দিতে পারলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চাটা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সেমিনার হওয়ার মতো চট্টগ্রামে কোনো উন্নত মানের কনফারেন্স হল নেই। ঢাকায় যেমন চীন মৈত্রী হল আছে। বে টার্মিনাল ও টানেলকে ঘিরে শহর এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা বিবেচনায় রেখে অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা দরকার। যেমন শহরের আরো কিছু সড়ক প্রশস্ত করা দরকার। বাকলিয়ার কেবি আমান আলী রোড ও বহদ্দারহাট খাজা রোডকে ঘিরে প্রকল্প নিচ্ছি।
মেয়র বলেন, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফ্ল্যাড ওয়াল করছে। শুধু ফ্ল্যাড ওয়াল না করে পাশে একটি রাস্তাও করা দরকার। এতে নদীর পাশে আলাদা ভিউ হবে। যাতায়াতের সুবিধা হলে মানুষ সেখানে বেড়াতে যাবে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রস্তাবও দিয়েছি।
তিনি বলেন, ওশ্যান অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক করার সুযোগ আছে চট্টগ্রামে। বঙ্গোপসাগরের পাশে বিরাট জায়গা আছে। এ ধরনের পার্ক ভারতেও নাই। ব্যাংককে আছে। এজন্য ৬০ একর জায়গা চেয়ে ডিসির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনিও সেটা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বিভাগীয় কমিশনারও খুব ইন্টারেস্টেড। তাদের আমি বলেছি, জায়গা বরাদ্দ দিলে আমি করে দেব।
শহরের উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রহণ করা হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। এত কিছুর ভিড়ে বছরের দুই-তিন মাস শহরবাসীকে জলাবদ্ধতায় কষ্ট পেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, এটা নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। সমন্বয়ের জন্য বিভাগীয় কমিশনারসহ একটি কমিটিও করে দিয়েছেন। আমাদের সেখানে উপদেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে নজর দিচ্ছি। তারা জিজ্ঞেস না করলেও নগরবাসীর স্বার্থে নজর দিচ্ছি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল-নালা পরিষ্কার রাখা দরকার। এক্ষেত্রে খালপাড়ের বাসিন্দাদের ফেলা বর্জ্যও দায়ী। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী মাসের শেষ দিকে এসে কার্যক্রম শুরু করব। যারা ময়লা ফেলেন তাদের জরিমানা করা হবে। তাহলেই মানুষ খালে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকবে। সে প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ঢেলে সাজাচ্ছি। একজনকে সব কাজ করতে দিলে কিছুই হয় না। তাই পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাজ ভাগ করে দিচ্ছি। ড্রেসও আলাদা করে দেব। অ্যাকশনে যাওয়ার আগে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচ ‘মাতব্বরে’ আটকে রোহিঙ্গা সমস্যা : মোমেন
পরবর্তী নিবন্ধ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পিতা-পুত্র গ্রেপ্তার