ছয় জোনে ভাগ হচ্ছে নগর

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চসিকের নতুন রূপরেখা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এবং গতি আনয়নে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ঘিরে রূপরেখা তৈরি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ওই রূপরেখার আওতায় স্থায়ীভাবে নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে ভাগ করা হচ্ছে ৬টি জোনে। জোনগুলোর আওতায় পৃথক করা হবে মশক নিধন ও উচ্ছেদ কার্যক্রমে নিয়োজিত সেবকদের দায়িত্ব। তবে বহাল থাকবে ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম।
এছাড়া গৃহস্থলী, মেডিকেল ও শিল্প বর্জ্যকে ঘিরেও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এ রূপরেখায়। পাশাপাশি নন-কনজার্ভেন্সি ওয়ার্ডগুলোর (যেসব ওয়ার্ড থেকে পৌরকরের সাথে বর্জ্য অপসারণ রেইট আদায় করা হয় না) কিছু অংশ থেকে কমিউনিটি ও সাংগঠনিকভাবে বর্জ্য অপসারণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে দৈনিক বর্র্জ্য অপসারণের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে জোন প্রধানের কাছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত চসিকের সপ্তম সাধারণ সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন ও রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেন ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি মোবারক আলীকে। তখন অবশ্য পুরো নগরীকে চারটি জোনে ভাগ করতে নির্দেশনা দেন মেয়র। পরবর্তীতে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ ও উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীসহ কাউন্সিলর মোবারক আলী একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়নে কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে ওই রূপরেখার খসড়া তৈরি হয়েছে। আরো যাচাই-বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা সিটি মেয়রের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন মোবারক আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রূপরেখা অনুযায়ী পুরো শহরকে স্থায়ীভাবে ছয়টি জোনে ভাগ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি জোনের প্রধান হিসেবে থাকবেন একজন করে পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা। আবার প্রতিটি জোনে দুইজন করে ১২ জন তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন। প্রতি তত্ত্বাবধায়কের অধীনে দুইজন করে ২৪ জন পরিদর্শক থাকবেন। ওই ২৪ জন পরিদর্শক ৪১ ওয়ার্ডের সেবকদের দৈনিক কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। পরিদর্শকগণ উর্ধ্বতনের কাছে দৈনিক অপসারিত বর্জ্যের তথ্য উপস্থাপন করবেন।
এছাড়া পরিচ্ছন্ন বিভাগের অধীনে নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সেক্ষেত্রে যেসব সেবক উচ্ছেদ কার্যক্রমে থাকবেন তাদের এবং মশক নিধন কার্যক্রমে নিয়েজিতদের ড্রেস কোড আলাদা করা হবে। তবে উভয় গ্রুপ নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করবে।
মেডিকেল বর্জ্যর বিষয়টিও অর্ন্তভুক্ত রূপরেখায়। এক্ষেত্রে সঠিক উপায়ে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ধ্বংস করার জন্য জাইকার অর্থায়নে একটি ‘ইনসিরেশন’ মেশিন সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া শিল্প বর্জ্য, হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারের বর্জ্য, নির্মাণ বর্জ্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জাহাজ থেকে উৎপাদিত বর্জ্য, ও পয়ঃবর্জ্য অপসারণের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয় ওই রূপরেখায়।
এ বিষয়ে চসিক কাউন্সিলর মো. মোবার আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিচ্ছন্ন শহর করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃক্সখলায় আনা ছাড়া উপায় নাই। এক্ষেত্রে মেয়র মহোদয়ও আন্তরিক। মেয়রের নির্দেশে আমরা রূপরেখা তৈরি করছি। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে হস্তান্তর করতে পারবো। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষতি প্রশমিত করে কিভাবে বর্জ্য অপসারণ করে শহরের সৌন্দর্য রক্ষা করা যায় সে আলোকেই রূপরেখা তৈরি করছি। ১৯৮৮ সালের অর্গানোগ্রামের আলোকে প্রস্তাবিত ছয় জোনে জনবল চূড়ান্ত করার সুযোগ আছে।
জাইকার ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, নগরে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে গৃহস্থলী বর্জ্য ১ হাজার ৮৩০ টন, সড়ক অবকাঠামোগত ও অন্যান্য বর্জ্য ৫১০ টন, বাণিজ্যিক বর্জ্য ৬৬০ টন। এর বাইরে দেড় হাজার টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপাদন হয়। উৎপাদিত বর্জ্যে থেকে চসিক সংগ্রহ করে মাত্র দুই হাজার টন।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর তৃতীয় তফসীল এর ১ দশমিক ৪ থেকে ১ দশমিক ৭ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে আবর্জনা অপসারণ, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া আছে। এতে উল্লেখ আছে, ‘কর্পোরেশন তার নিয়ন্ত্রণাধীন সকল জনপথ, সাধারণ পায়খানা, প্রস্রাবখানা, নর্দমা, ইমারত ও জায়গা থেকে আর্বজনা সংগ্রহ ও অপসারণ করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কর্পোরেশন নগরবাসীর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করবে এবং সাধারণ নোটিশের মাধ্যমে ওখানে ময়লা ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে’। এছাড়া আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরপরও বর্জ্য অপসারণ নিয়ে নানা অভিযোগ আছে নগরবাসীর। এ অবস্থায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চসিক রূপরেখা প্রণয়ন করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন
পরবর্তী নিবন্ধকুমিল্লার ঘটনা চিহ্নিত মহলের অপকর্ম : তথ্যমন্ত্রী