অবশেষে আলোর পথ দেখতে শুরু করেছে বার্ষিক ৩০ লক্ষ টন পরিশোধন সক্ষমতার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) প্রকল্প। ইতোমধ্যে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগে জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল) এবং সম্ভাব্য ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরম্যান্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন) ঠিকাদার ফ্রান্সের টেকনিপের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বর্তমানে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির কথা জানালেন ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লোকমান হোসেন। তিনি আজাদীকে বলেন, ইপিসি কাজের জন্য ইতোমধ্যে ফ্রান্সের টেকনিপ টেকনিক্যাল প্রপোজল (প্রস্তাব) জমা দিয়েছে। ওই প্রস্তাবনা নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে ৮ দফা যৌথ বৈঠক হয়েছে। টেকনিপের প্রপোজলের সাথে পিএমসির (প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট) ৫৩৫টি ডেভিয়েশন (পার্থক্য) ছিল। এর মধ্যে বৈঠকে ৩৬০টি ডেভিয়েশন সমাধান হয়েছে। আরও ১৭৫টি ডেভিয়েশন নিয়ে আলোচনা চলছে। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আমরা ইপিসি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করতে পারব।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান রিফাইনারিটি ৫৩ বছর আগের হলেও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার মাধ্যমে গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি পরিশোধন করেছি। এর মাধ্যমে একটি মাইলফলক অর্জিত হলেও দেশীয় জ্বালানি চাহিদার ২৫ শতাংশেরও কম পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছি। তাই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বার্ষিক ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন পরিশোধন সক্ষমতার ইআরএল-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য ১৮ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করছি। রিফাইনারিটি নির্মিত হলে দেশের জ্বালানি খাতে নতুন মাইলফলক রচিত হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার আরও পরিবর্তন ঘটবে। টানেল, আউটার রিং রোডের পাশাপাশি এই রিফাইনারির মাধ্যমে চট্টগ্রামের চেহারাও অনেকখানি পাল্টে যাবে। সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি। ১৯৬৬ সালে নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ফ্রান্সের টেকনিপ প্লান্টটি নির্মাণ করে। বর্তমানে জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার মধ্যে ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পটি হাতে নেয় বিপিসি। শুরুর দিকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)।
২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি করে বিপিসি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর উপস্থিতিতে চুক্তি সই হয়। ওইদিন মন্ত্রী বলেছিলেন, পরবর্তী বছরের মধ্যেই ইআরএল-২ প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। কিন্তু সাড়ে ৫ বছরেও প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কখন শুরু হবে, তার উত্তরও কারো কাছে নেই।
ইআরএল-২ প্রকল্পটি চালু হলে ইআরএলের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা প্রতি বছর ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। এতে মোট চাহিদার ৭৫ ভাগ মেটানো সম্ভব হবে। ইআরএল-২ এর মাধ্যমে ফিনিশড প্রডাক্ট হিসেবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, জেট এ-১, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেজ অয়েল, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার পাওয়া যাবে।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসান আজাদীকে বলেন, সেপ্টেম্বরের ২০-৩০ তারিখের মধ্যে ইআইএল, টেকনিপসহ বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এতে ইপিসি প্রপোজল নিয়ে কিছু পার্থক্য কমে আসলেও এখনো বেশ কিছু পার্থক্য রয়ে গেছে। যেগুলোতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সাথেও বৈঠক করব। বড় বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা গেলে ইআরএল-২ প্রকল্পটি নিয়ে ইপিসি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি হবে।