ঢাকার গাবতলী সংলগ্ন তুরাগ নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় ৫ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমিনবাজার কয়লার ঘাটের কাছে গতকাল শনিবার সকালে ডুবে যাওয়া ট্রলারটির আরও কয়েকজন যাত্রী এখনও নিখোঁজ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। নৌপুলিশের ঢাকা বিভাগের পুলিশ সুপার ফরিদুল ইসলাম জানান, সম্ভবত আরও ৪/৫জন নিখোঁজ আছে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ট্রলারটি ডুবে গেলেও ফায়ার সার্ভিস পৌনে ৯টার দিকে খবর যায়। তারপরই নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ শুরু করে ডুবুরিরা। খবর বিডিনিউজের।
জীবিকার জন্য শহরে এসে সলিল সমাধি : আমিনবাজারের বড়দেশী এলাকার তুরাগ নদীর পাড়ে বসে কাঁদছিল শিশু তামিম। তার জন্য ঝালমুড়ির ঠোঙা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা শরিফুল ইসলাম। শিশুটির কান্না কিছুতেই থামছিল না। সে দিনভর অপেক্ষা করেছে। এখন মা, বোন আর ভাইকে ছাড়া কিছুতেই ফেরত যাবে না। কিন্তু শরিফুল অসহায়।
ছয় মাস গ্রামে থেকে গেরস্থালি করেন আর ছয় মাস ঢাকায় এসে কয়লার ঘাটে কাজ করেন। কয়েক বছর এভাবেই চলছিল শরিফুলের। গতকাল সকালে স্ত্রী রুপায়ন খাতুন আর চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাজে যাওয়ার জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠেছিলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌকাটি তুরাগ নদীতে ডুবে যায়। শরিফুল আর তার দুই ছেলে কোনোমতে উঠতে পারলেও স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আর উঠতে পারেনি।
ট্রলারটি নদীর ওপারে গাবতলী যাচ্ছিল। আর এর অধিকাংশ যাত্রীই ছিলেন শ্রমিক কিংবা তাদের পরিবারের সদস্য।
কাঁদতে কাঁদতে শরিফুল বলেন, তারা ভাড়া থাকেন বড়দেশী গ্রামে আর কাজ করেন গাবতলীর দ্বীপনগর কয়লাঘাটে। বাচ্চারা প্রতিদিন বড়দেশী গ্রামের ভাড়া বাসাতে থাকে। শনিবার সকালে কী মনে করে তাদের মা রূপায়ণ সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়েছিল। ওই নৌকায় শরিফুলের শ্যালিকা সোয়ালা এবং তার শিশুপুত্র ইমরানও ছিল। তাদের দুজনের লাশ পাওয়া গেছে।
একই নৌকায় ছিলেন তাসলিমার আরেক বোনের স্বামী মাহফুজুল ইসলাম। মাহফুজুল গাবতলীর দ্বীপনগর কয়লাঘাটে বেলচা চালান। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো খাবারের বাটিটা সঙ্গে নিয়ে ভোর ৫টার দিকে নৌকায় উঠে বসেছিলেন তারা। নৌকায় ১৮ জন ছিল। নৌকার ইঞ্জিন চালুর আগে স্রোতের টানে এটি কিছু দূরে সরে যায়। ইঞ্জিন চালু হতেই মাঝি নৌকার হাল এমনভাবে ঘোরান, নৌকাটি সরাসরি একটি চলন্ত একটি বালুবাহী জাহাজের নিচে চলে যায়।












