‘বাঁচাও’ বাঁচাবে নারীকে

ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বোন ধর্ষণ ঠেকাতে বানালেন অ্যাপ

| রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বোন, সেই থেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে নারীদের এমন ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য ‘বাঁচাও’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন তিনি। কোনো নারী যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যা ধর্ষণের ঘটনায় মোড় নিতে পারে, তখন এই অ্যাপটির মাধ্যমে তিনি সহায়তা চাইতে পারবেন।

বাঁচাও ডট লাইফ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল আহমেদ জানান, প্রেম করে বিয়ের পর ২০০১ সালে তার বোনকে ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিলেন তার স্বামী। এরপর তাকে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, ধর্ষণকারীরা তাকে হুমকি দিয়েছিল হত্যার পর মর্গে তার মৃতদেহকেও ধর্ষণ করা হবে। ওই দিন থেকে আমার বোন আর কোনো কথা বলেনি। আমার মা এই আঘাত সইতে পারেনি। ২০১৮ সালে মৃত্যুর আগে তিনি মেয়েদের রক্ষা করার জন্য কিছু একটা করার জন্য বলেন। তিন বলেছিলেন, তুমি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এমন পৈশাচিক ঘটনা থেকে অন্তত একটা মেয়েকে রক্ষার জন্য হলেও কিছু একটা কর। খবর বিডিনিউজের।
মায়ের মৃত্যুর পর জালাল ধর্ষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বাঁচাও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গবেষণার কাজে হাত দেন, যেখানে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন।
অবশেষে নারীরা যাতে প্রয়োজনের সময়, বিশেষ করে ধর্ষণ থেকে নিজেদের রক্ষায় সহায়তা চাইতে পারে, সেজন্য ‘বাঁচাও’ নামে অ্যাপটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। গত আগস্টে সীমিত আকারে অ্যাপটি চালু করা হয়। ২ অক্টোবর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে এ পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষ তা ডাউনলোড করেছেন। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা এবং এরপরেই রয়েছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দারা।
জালাল আহমেদ বলেন, ৮০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনাই নারীটির আশপাশের কোনো স্থানে ঘটে এবং সেটা তার আবাসস্থল থেকে বেশি দূরে হয় না। আমরা দেখেছি, একমাত্র সমাজের সবাই এগিয়ে এলেই ধর্ষণ ঠেকানো সম্ভব, কারণ তারাই দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু কোনো নারীর যখন সহায়তা দরকার হয় তখন সবখানে তাদের পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে ৮০০ জনের জন্য একজন পুলিশ সদস্য রয়েছে। কাউকে সহায়তা করার জন্য তাদের পক্ষে কী দূর থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব? একমাত্র সমাজের লোক কিংবা স্বেচ্ছাসেবকরাই দ্রুত সহায়তা করতে পারবেন। এই অপরাধ ঠেকাতে লোকজন আমাদের সহায়তা করতে চায় এবং তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
সফলতার বিষয়ে তিনি জানান, ইতোমধ্যে সহায়তা চেয়ে ধর্ষণের হাত থেকে নারীদের রক্ষা পাওয়ার মতো ৬০টি ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। আমরা ৬৪ জেলাতেই কাজ করছি এবং প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
কীভাবে কাজ করে ‘বাঁচাও’ অ্যাপ : গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাঁচাও অ্যাপ। যেখানে একটি মাত্র ছোঁয়ায় সমস্যায় পড়া একজন নারী তার কাছাকাছি স্বেচ্ছাসেবক, পরিবার, বন্ধু অথবা পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। এই অ্যাপটি সহায়তা চাওয়া নারীর অবস্থান নির্দেশ করবে এবং এর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে টেঙট কিংবা অডিওর মাধ্যমে তার যোগাযোগ স্থাপন করবে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ইনস্টল করার পর জরুরি যোগাযোগের জন্য পরিবার এবং বন্ধুদের ফোন নম্বর নির্বাচন করতে হয়। যদি কোনো নারী ধর্ষণের আশঙ্কা করেন তবে তিনি ‘রেপ অ্যালার্ট’ লেখা লাল বোতাম চাপলেই হবে। কাছাকাছি থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা ওই সতর্কবার্তা পেয়ে যাবেন এবং তারা ‘মেসেজ’ দিয়ে যোগাযোগ করবেন কিংবা ওই নারীকে সহায়তার জন্য ফোন করবেন। ওই নারীও পাল্টা যোগাযোগ করতে পারবেন। নিজেকে নিরাপদ মনে করলে ওই নারীকে ‘সেইফ নাউ’ লেখা সবুজ বোতামে একবার চাপ দিতে হবে। এছাড়া ‘বাঁচাও’ হেল্পলাইনে যে কেউ ফোন করতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীতে এবার ২৭৬ মণ্ডপে হবে দুর্গা পূজা
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ২৪ দিনে ৮ বিদ্যালয়ে চুরি