গত শনিবার সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন। অত্যন্ত উৎসবের আমেজে এবং শান্তিপূর্ন পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে এই নির্বাচন। যেখানে প্রায় ১৬০০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এই নির্বাচন নিয়ে অনেকের মাঝে শংকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমানের দক্ষ পরিচালনায় কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনে মঞ্জু-হাসান-দেবাশীষ পরিষদ পূর্ন প্যানেলে জয়লাভ করেছে। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আর খেলোয়াড় সমিতির ইতিহাসেতো প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো এই নির্বাচন। প্রায় এক দশক চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে কোন নির্বাচন না দেখা ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক সবাই খেলোয়াড় সমিতির নির্বাচনটিকে আনন্দের উপলক্ষ্য হিসেবে দেখেছিল। তাইতো সেই ষাট কিংবা সত্তরের দশক থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের ফুটবলাররাও এসেছিলেন ভোট দিতে। তাও একেবারে স্বতস্ফুর্তভাবে। একদিকে ফুটবলাররা এমন পরিবেশে ভোট দিতে পেরে যেমন খুশি হয়েছে তেমনি অন্যদিকে আফসোসও করছিল অনেকেই। কারন চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যে নির্বাচন নেই গত এক দশক।
গত শনিবার চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির নির্বাচন শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন অনেকেই। অথচ তারা নিজেদের বেলায় নির্বাচন করতে চায়না। কেমনে একজনের কাধের উপর ভর করে পার হবে সে চেষ্টায় থাকে। নিজেরা নির্বাচনকে ভয় পেলেও অপরের নির্বাচনে খবরদারি করতে হাজির ছিলেন ঠিকই। তাইতো শনিবার ভোট দিতে আসা প্রবীন ফুটবলারদের অনেকেই যারা আবার কেউ কেউ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরও তারা বেশ হতাশার সুরে বললেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আমরা ভোট দিতে পারিনা অনেক বছর। ভোটকে কেন এত ভয়। কর্মকর্তা হিসেবে নিজের দক্ষতা দেখাতে পারলে ভোটকে ভয় পাওয়ারতো কোন কারন নেই। অথচ খেলোয়াড় সমিতির এই নির্বাচন যিনি পরিচালনা করেছেন সেই হাফিজুর রহমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি হয়েছেন ভোটের মাধ্যমে। তাই হয়তো এই নির্বাচন পরিচালনা করে তিনি সবচাইতে বেশি তৃপ্ত। কারন তিনিই বুঝেন ভোটের আনন্দ। অন্যরা হয়তো ভোটের উৎসবে দর্শক হিসেবে তামাশা দেখেছেন।
এদিকে ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ফলে এক সময় মাঠ কাঁপানো ফুটবলার যারা এখন জীবন সায়াহ্নে তারা ভোট দিয়েছেন আনন্দ চিত্তে। অনেরকেই এসেছেন অন্য কারো সাহায্য নিয়ে। নিজে একা চলতে পারেননা। কিন্তু উৎসবে শামিল হতে ছুটে এসেছেন দুর দুরান্ত থেকে। বয়সের কারনে অনেকেই ঘরবন্দী হয়ে গেছেন। কিন্তু যখনই খেলোয়াড় সমিতির নির্বাচনের কথা শুনেছেন তখন আর ঘরে থাকতে পারেননি। এমন উৎসব কি আর পাওয়া যাবে জীবনে ? তাই প্রাপ্ত সুযোগটাকে হারাতে চাননি তারা। বয়স, বার্ধক্য, অসুস্থতা, শারিরীক অক্ষমতা সবকিছুই যেন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল তাদের কাছে। জীবনের শেষ বয়সে ভোট দিতে এসে কত জনকেই যে কাছে পেয়েছেন তারা। যাদের সাথে হয়তো দুই কিংবা তিন দশক দেখা হয়নি। আর এমন মহা মিলনের মুলেই ছিল খেলোয়াড় সমিসতির নির্বাচন। অথচ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ সংস্থা গুলোতে বছরের পর বছর নির্বাচন নেই। আর তাতে এ ধরনের মহা মিলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কাউন্সিলররা। তাই ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির এই নির্বাচন যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সহ সব ক্রীড়া সংগঠনে যেন নির্বাচন হয়।