ক্যান্সারের অসুস্থতার মধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ খান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার ভোরে তার মৃত্যু হয় বলে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা পিয়াস মজিদ জানান। বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক ফরহাদ খানের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি। তার স্ত্রী গত হয়েছেন আগেই। খবর বিডিনিউজের।
বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা কাজী জাহিদুল হক জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এর মধ্যেই করোনার সংক্রমণ ধরা পড়লে গত সপ্তাহে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। সকাল সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে মিরপুর ১১ নম্বরের জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে ফরহাদ খানের জন্ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলায় লেখাপড়া করে ১৯৭০ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী কলেজে তার কর্মজীবন শুরু। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেওয়ার পর ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন ফরহাদ খান। ২০০২ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে অবসরে যান।
ফরহাদ খানের কর্মজীবনের একটি অংশ কেটেছে বেতারের সঙ্গে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বেতারে সংবাদ অনুবাদ ও পাঠক হিসেবে তিনি কাজ করেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের ‘উত্তরণ’ ও ‘সংবাদ বিচিত্রা’র সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। পরে জার্মানির ডয়েচে ভেলের বেতার বিভাগেও তিন বছর কাজ করেছেন।
পাশাপাশি টেলিভিশনে ভাষা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন ফরহাদ খান। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি ‘মোদের গরব মোদের আশা’, ‘আহমান বাংলা’ এবং ‘মাতৃভাষা’ নামে কয়েকটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন।
ফরহাদ খানের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতীচ্য পুরাণ, বাংলা শব্দের উৎস অভিধান, চিত্র ও বিচিত্র, হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী, শব্দের চালচিত্র, নীল বিদ্রোহ, বাঙালির বিবিধ বিলাস। বাংলা একাডেমি ছোটদের অভিধানসহ কয়েকটি বইয়ের সম্পাদনার কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন। প্রবন্ধ সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ফরহাদ খানকে ‘সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধ সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয়।