সেই নালার পাশে কে দিল দেয়াল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

আগ্রাবাদে যে উন্মুক্ত নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়ার মৃত্যু হয়েছিল সে নালার পাশে দেয়াল দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইটের দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়। অবশ্য এমনভাবে দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে ফুটপাতের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। এতে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দাবি, সিডিএ দেয়ালটি নির্মাণ করেছে। তবে এ বিষয়ে সিডিএ’র বক্তব্য পাওয়া যায় নি। এর আগে সাদিয়ার মৃত্যুর পর সিডিএ ও চসিক কেউ নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ স্বীকার করেনি। বরং পরস্পরকে দোষারোপ করেছিল। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এড়ানোর সংস্কৃতিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ লোকজন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর দেয়াল বিষয়ে পথচারীদের কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ‘এ যেন রোগীর মৃত্যুর পর ডাক্তার আসার মত অবস্থা হয়েছে’। তবে বেশিরভাগ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দাবি করেছেন, শহরের যেসব খাল-নালা উন্মুক্ত আছে সেখানে ‘ব্যারিয়ার’ বা অন্য কোনো পন্থায় যেন পথচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্ল্যাব দেয়ারও দাবি করেন তারা। এর আগে মুরাদপুর ও মেয়র গলিতে চশমা খালে পড়ে তিনজন মারা গিয়েছিল। এ দুই স্থানসহ শহরের অন্যান্য স্থানে উন্মুক্ত খাল-নালার পাশে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়নি এখনো।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মধ্যরাতে সিডিএ দেয়ালটি নির্মাণ করেছে। অথচ তারা এতদিন সেখানে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেনি। এ কর্মকর্তা বলেন, সিডিএ শেখ মুজিব রোডে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। তাই সেখানে রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য সবকিছুর দায়িত্ব তাদের। কিন্তু মানুষ সিটি কর্পোরেশনকে ভুল বুঝছে।
মোরশেদুল আলম চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে প্রথমে স্ল্যাব দেয়া দরকার ছিল। এরপরই নালের পাশে দেয়াল দেয়া উচিত। এতে পথচারীর ঝুঁকিপূর্ণ চলাচলে সুবিধা হত। কিন্তু তা না করে দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে। অর্থাৎ পথচারীরা পড়বে নতুন ঝুঁকিতে।
এ বিষয়ে জানার জন্য সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ও এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেন নি। তবে সিডিএ’র এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, আমরা সেখানে কোনো দেয়াল তৈরি করিনি। ওটা সিটি করপোরেশন করেছে।’
জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১০ টার দিকে আগ্রাবাদ শেখ মুুজিব রোডের বাদামতলী মোড়ে মাজার গেটের পাশের নালায় পড়ে যান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া। এর পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ২টা ৫০ মিনিটে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর সিডিএ’কে একটি চিঠি পাঠায় চসিক। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সিডিএ জননিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করছে দাবি করে বলা হয়, ‘বাদামতলী মোড়ে চসিক কর্তৃক পূর্বে নির্মিত ফুটপাত সিডিএ ভেঙে ফেলে। পাশ্ববর্তী ড্রেন উন্নয়ন পূর্বক ড্রেন স্ল্যাবের মাধ্যমে ফুটপাত নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় সাদিয়া নালায় পড়ে মারা যায়।’
উল্লেখ্য, যে স্থানে সাদিয়া পড়ে যান সেখানে এর আগের সাতদিনে চারজন পড়ে আহত হয়েছিলেন। এর আগে গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর চশমা খালে পড়ে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। গতকাল পর্যন্ত তার লাশ উদ্ধার হয়নি। সালেহ আহমেদের পড়ে যাওয়ার স্থানে স্থায়ী কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি হয়নি। গত ৩০ জুন মেয়র গলিতে চশমা খালে একটি সিএনজি পড়ে মারা যান দুইজন। এরপর স্থানীয়রা ওই সড়কে সিএনজি প্রবেশ করতে না পারার জন্য একটি খুঁটি গেড়ে দিয়েছিল। কয়েকদিন আগে কে বা কারা সেটা তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রুবায়েত। এছাড়া খালের পাড়েও কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
চলতি বছরের তিনটি ছাড়াও বিগত সময়ে একাধিক দুর্ঘটনায় অনেকে হতাহত হয়েছেন বিভিন্ন খাল-নালায় পড়ে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২ জুলাই শিল্পকলার সামনে নালায় পড়ে শীলব্রত বড়ুয়া নামে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা মারা যান। ২০১৮ সালের ৯ জুন আমিন জুট মিল এলাকায় মারা যায় এক শিশু। গত বছর হালিশহর ব্রিকফিল্ড এলাকায় মহেশখালে পড়ে মারা যায় দুই কিশোরী। চলতি বছর চান্দগাঁওয়েও একটি সিএনজিও নালায় পড়ে গিয়েছিল। তবে সেবার প্রাণহানি ঘটেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পরও নিরাপত্তা বেষ্টনি দেয়ার দাবি করেছিল নগরবাসী। তবে দেয়া হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে মুরাদপুর, কালামিয়া বাজার ও বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে বেশিরভাগ খাল-নালা উন্মুক্ত দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে হচ্ছে স্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড
পরবর্তী নিবন্ধকোভিড পিলে আশার আলো