ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসেই চট্টগ্রামে বেশি হৃদরোগী

বিশ্ব হার্ট দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে বিভিন্ন অসুখে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তার শতকরা ৩১ শতাংশই মারা যায় হৃদরোগের কারণে। একারণেই বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগকে এক নম্বর ঘাতকব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ লাখ, শ্বসনতন্ত্রের রোগজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ লাখ, ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ৮২ লাখ। অন্যদিকে, হৃদরোগজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বছরে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭৩ লাখ। অর্থাৎ সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি ৭৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। যার শতকরা ৮০ ভাগই স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে। তবে ২০৩০ সাল নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর এই সংখ্যা বেড়ে ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন। এক তথ্যে দেখা যায়, মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়া করোনায় সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩১ মিলিয়ন। কিন্তু সারাবিশ্বে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৫৩ মিলিয়ন। হৃদরোগের ভয়াবহ মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর সারাবিশ্বে পালিত হয় ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে বা বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে আজ। ২০০০ সাল থেকেই এদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউজ টু কানেক্ট এভরি।’ দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে র‌্যালি, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
তবে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালিত হলেও বাংলাদেশে এখনো এটি জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এটিকে জাতীয় দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ।
বাংলাদেশেও হৃদরোগের ভয়াবহতা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তরুণ ও যুবকরা হৃদরোগে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি একশ’জন রোগীর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ জন হার্টের রোগী। আর বাংলাদেশের মধ্যে এ রোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে রয়েছে চট্টগ্রামের নাম। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভাসের কারণেই চট্টগ্রামে হৃদরোগী বেশি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রবীর কুমার দাশ। সমপ্রতি চট্টগ্রামে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল উদ্বোধন করতে এসে অনেকটা অভিন্ন তথ্য দিয়েছিলেন বিশ্বের খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ভারত-বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি জানিয়ে ডা. দেবী শেঠী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের লোকজনের জিনগত বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। জিনগত কারণে ভারত-বাংলাদেশের লোকজন হার্ট অ্যাটাকের বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এখানকার মানুষের জীবনধারা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস ও ধুমপান প্রি-মেচিউর হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
খ্যাতনামা এই চিকিৎসক বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ ব্যায়াম করেন না। আর বেশি বেশি মাংস খেতে পছন্দ করে। হৃদরোগের কারণ হিসেবে এসবও কম দায়ী নয়। আর ক্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভাস বলতে লাল মাংসের (রেড মিট) প্রতি চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের বেশি আগ্রহের কথা বলেছেন ডা. প্রবীর কুমার দাশ। চিকিৎসকরা বলছেন, উন্নত আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস, অসচেতনতা, এসব কারণে হৃদরোগ শুধু বড়দের নয়, শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ১৭ ভাগই হৃদরোগের কারণে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ২ মৃত্যু নতুন শনাক্ত ৩৩
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা