দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। রুটিন মেনে ক্লাসে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। শ্রেণি কার্যক্রম চালুর পর থেকে চট্টগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীর আক্রান্তের খবর মেলেনি। তবে জেলায় প্রাথমিকের চারজন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে গতকাল এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খোলার প্রথম দিন থেকেই ছাত্রছাত্রীদের শরীরে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। প্রথম দিন ১২ সেপ্টেম্বর মহানগরের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত চারজন শিক্ষার্থীর শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা পাওয়ায় তাদের বাসায় ফেরত পাঠানো হয়। এরপর থেকে প্রায়ই একজন-দুজন করে শিক্ষার্থীর জ্বর ধরা পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। জ্বর ধরা পড়লে ওই শিক্ষার্থীকে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। একই সাথে শিক্ষার্থীর করোনা টেস্ট করানোসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শও দিচ্ছেন অভিভাবকদের। তবে জ্বর ধরা পড়লেও সন্তানদের করোনা পরীক্ষায় অভিভাবকরা ততটা আগ্রহী নন বলে মনে করেন শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। ফলে জ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা করোনায় সংক্রমিত কিনা তা জানা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনায়েত বাজার কলিম উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট ৮ জন শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বর ধরা পড়েছে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়ায় তাদের বাসায় ফেরত পাঠানো হয়। তারা এখন বাসায় রয়েছে। তবে জ্বরে আক্রান্ত হলেও এসব শিক্ষার্থী করোনায় সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখর দাশ। পরামর্শ দেওয়া হলেও সন্তানের করোনা টেস্ট করাতে অভিভাবকরা ততটা আগ্রহী নন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু টেস্ট করানো হয়েছে, এমন তথ্য কোনো অভিভাবক আমাদের জানাননি। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ক্লাস চালুর পর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগরীর হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বর পাওয়া গেছে। অভিভাবকদের সাথে কথা বলে প্রায় সময় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক। তবে জ্বরে আক্রান্ত কোনো শিক্ষার্থী করোনায় সংক্রমিত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। তাপমাত্রা বেশি পাওয়ার পরপর অভিভাবকের সাথে কথা বলে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা শারমিন বলেন, জ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে বাসায় আলাদা রাখার পাশাপাশি করোনা টেস্ট করানোর জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি।
এ পর্যন্ত ৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বর ধরা পড়েছে পশ্চিম গোসাইলডাঙ্গা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া একজন শিক্ষকও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। শুধু এ কয়টি স্কুলে নয়, প্রায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শরীরে জ্বর ধরা পড়ছে। কিন্তু টেস্ট না করায় তারা করোনা সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোনোভাবেই সংক্রমণ না ছড়ায় সেদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বর পাওয়া গেলে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া এবং অভিভাবকদের যথাযথ পরামর্শ প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত হলে সাথে সাথে আমাদের কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবেই রিপোর্ট করে। তবে যতক্ষণ করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের কাছে রিপোর্ট দিতে হয় না। যার কারণে জ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। তবে কোনো শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হলে বাসায় যেন তাকে আলাদা রাখা হয়, প্রয়োজনে করোনা টেস্ট করানোর জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। জ্বরে আক্রান্ত সন্তানের করোনা টেস্ট করানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। নিজের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার স্বার্থেই টেস্ট করানো প্রয়োজন। আমরা সে পরামর্শই দিচ্ছি।












