দেশের সংবাদপত্র শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের চেতনার বাতিঘর। একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি সমাজে পরিবর্তন আনার জন্যই সারাজীবন কাজ করেছেন। কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশে নয়, চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের কথা বলার জন্যই মূলত তিনি দৈনিক আজাদী প্রকাশ করেছিলেন।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনে তাঁর অবদান ছিল অসাধারণ। তিনি সাপ্তাহিক কোহিনূর, কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেস, কোহিনূর লাইব্রেরি এবং দৈনিক আজাদী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীকে একটি পরিশীলিত জীবনযাত্রায় যেমন পরিচালিত করতে প্রয়াস পেয়েছেন, ঠিক তেমনি একই সময়ে তিনি মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের অপরিহার্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়ার প্রচার প্রসারে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। সুন্নিয়তের প্রাণকেন্দ্র জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, এবং আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রস্ট প্রতিষ্ঠায়ও ছিল তাঁর অসামান্য অবদান।
বক্তারা বলেন, আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার আজ থেকে শত বছর আগে রেঙ্গুন গিয়ে হযরত সিরিকোটি হুজুরের হাতে বয়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নবী বংশের এমন একজন কামেল অলীকে চট্টগ্রামে এনে দেশের হাজার হাজার মানুষকে কাদেরিয়া ত্বরিকায় সম্পৃক্ত হবার সুযোগ করে দেন। তিনি নিজের বাসভবন আন্দরকিল্লার কোহিনূর মঞ্জিলকে সিরিকোটি হুজুরের বাসভবন তথা প্রথম খানকাহ্ হিসেবে চালু করেন। আর এখান থেকে প্রজ্জ্বলিত সুন্নিয়াত ও কাদেরিয়া সিলসিলাহ’র আলো আজ সমগ্র দেশে পৌঁছে গেছে। চট্টগ্রামে ত্বরিকতের আবাদের ক্ষেত্রে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা ক্বেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক নিজের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দ.) দিবসেই দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রকাশনার সূচনা করেন বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক (রহঃ)’র ৫৯তম ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে খতমে কোরান, মিলাদ মাহফিল এবং গাউসিয়া শরীফ শেষে স্মারক আলোচনা জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মুহাম্মদ কমিশনারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এবং মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের একমাত্র পুত্র এম এ মালেক। প্রধান আলোচক ছিলেন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও করোনা রোগীর সেবা, কাফন-দাফন কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ্ব অ্যাড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা এম এ মান্নান, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল আলম, গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আলহাজ্ব মাহবুবুল হক খান, দায়েম নাজির জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া জামে মসজিদের মোতায়াাল্লী সদস্য আলহাজ্ব আর ইউ চৌধুরী শাহীন, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং’র সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আবু নাসের রনি, গাউসিয়া কমিটির মানবিক সেবার কর্মসূচির সদস্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ আহসান হাবীব চৌধুরী হাসান, মুহাম্মদ এরশাদ খতিবী, মাওলানা আবদুল মালেক, দক্ষিণ জেলা গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শেখ মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ মোজাফফর আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত ও না’তে রাসুল (দ.) পাঠ করেন মাওলানা মুহাম্মদ ইমরান হাসান কাদেরী ও হাফেজ মাসুম মুহাম্মদ ইমরান। মরহুমের ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে বাদে ফজর থেকে পবিত্র খতমে কোরান ও খতমে গাউসিয়া শরীফ আদায় করা হয়। স্মারক আলোচনা শেষে মরহুমের মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, জেয়ারত, মিলাদ- কেয়াম, মুনাজাত করেন আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা এম এ মান্নান।