তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। সাহিত্যিক ও চিকিৎসক। বঙ্কিম যুগে আবির্ভূত হয়েও তিনি রোমান্সের চর্চায় আগ্রহী না হয়ে বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। ‘স্বর্ণলতা’ তাঁর একটি সাড়া জাগানো উপন্যাস।
তারকনাথের জন্ম ১৮৪৩ সালের ৩১ অক্টোবর নদীয়া জেলার অন্তর্গত বাগঅচিড়া গ্রামে (বর্তমান যশোহর জেলা)। তাঁর পিতা মহানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় অত্যন্ত ধামিক ও উদারচেতা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর ইংরেজি শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। তাই তারকনাথের যখন মাত্র দশ বৎসর বয়স তখন তাঁকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। তারকনাথ কলকাতার লন্ডন মিশনারী সোসাইটির স্কুলে থেকে ১৮৬৩ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ১৪ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে মেডিকেল কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এল. এম. এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কর্মজীবনে তাঁকে সরকারি চিকিৎসক রূপে দীর্ঘ ২২ বৎসর কাল কলকাতা, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, যশোহর ও বক্সারে কাটাতে হয়েছে। প্রথমত অ্যাসিস্টেন্ট সাজন রূপে তিনি যোগদান করেন। পরে ১৮৭১ সালে ডেপুটিসুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ ভ্যাকসিনেশন, এবং সবশেষে তিনি বক্সারে প্রথম শ্রেণীর অ্যাসিস্টেন্ট সাজ’ন রূপে সেন্ট্রাল জেলের চিকিৎসক হন।
কৈশোরকাল থেকেই তিনি সাহিত্যানুরাগী হয়ে ওঠেন। কর্মজীবনে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ান এবং গ্রামবাংলার মধ্যবিত্ত সমাজের পারিবারিক জীবনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের সংযোগ ঘটে (১৮৪৩-৯১) ছিলেন পেশায় চিকিৎসক, সরকারি কর্মসূত্রে জীবনের অনেকটা সময় তিনি উত্তরবঙ্গে কাটিয়েছিলেন, মিশেছিলেন নানা ধরনের লোকের সঙ্গে। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাই তাঁকে কথাসাহিত্য-রচনায় প্রেরণা দিয়েছিল। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্বর্ণলতা (১৮৭৪) প্রথমে রাজশাহী-বোয়ালিয়া থেকে প্রকাশিত ও শ্রীকৃষ্ণ দাস-সম্পাদিত জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে (১৮৭২-৭৩) প্রকাশিত হয়। তারকনাথের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হরিষে বিষাদ’ এবং ‘অদৃষ্ট’ (১২৯৮ বঙ্গাব্দ) তার একটি গল্পের বই এই সমস্ত রচনায় লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছিল। তার অসমাপ্ত উপন্যাসটির নাম বিধিলিপি। তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ১৮৯১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মৃত্যবরণ করেন।