সৌর বিদ্যুতে সুপেয় পানি

দুর্গম পাহাড়ে উদ্ভাবনী প্রকল্প

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে পানির সংকট দূর করতে ‘উদ্ভাবনী প্রকল্প’ নিয়েছে সরকার। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় জেলার দুর্গম ৭ গ্রামের বাসিন্দা সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানি পাচ্ছে। এতে দূর হয়েছে যুগের পর যুগ চলা সুপেয় পানির সংকট। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এধরনের প্রকল্প বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।
পাহাড় বেষ্টিত নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সারা বছরই এখানে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। দুর্গম এলাকায় গভীর বা অগভীর নলকূপ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হয় ভূ-পৃষ্ঠের পানির উপর। বর্ষা বা শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হলে সেখানের বাসিন্দাদের বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করতে হয় অথবা অনেকে আবার ২-৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে। পাহাড়ের পথ ডিঙিয়ে খাবার জল সংগ্রহ করা দুরূহ কাজ। তবে দুর্গম এলাকায় সুপেয় জলের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় এভাবে খাগড়াছড়ির ৭টি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রামে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২শ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ টাকা। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে চলা মোটরের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের যুগ যুগ ধরে চলা দীর্ঘ দিনের পানির সংকট দূর হয়েছে। পানির জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় না। উঁচু পাহাড়ের পাড়াগুলোতে ঘরে দোরগোড়ায় পানি পাওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ২৫ কি.মি. দূরে জনপদ পানছড়ি। উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১০ কিলিমিটার দূরে পায়ুং কার্বারি পাড়া। বন্ধুর পথ পেরিয়ে এখানে যেতে হয়।
পাহাড়ের উপরে এ গ্রামে ৫৫ পরিবারের বাস। এখানকার প্রধান সমস্যা ছিল সুপেয় পানি। সমস্যা দূর করতে পাড়ার মাঝখানে বসানো হয়ে ৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ট্যাংক। ১২শ ওয়াটের ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে মাটির সাড়ে ৪শ ফুট গভীর থেকে পানি তোলা হচ্ছে। ট্যাংক থেকে পানি সংগ্রহ করছে স্থানীয়রা। গ্রামের বাসিন্দা ললিজয় ত্রিপুরা, গৌড়ি ত্রিপুরা ও মনিকা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামে আগে পানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দূরে ছরা বা ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হত। সুপেয় পানির সংকট ছিল। এখন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ট্যাংকিতে পানি তোলা হচ্ছে। এসব ট্যাংকি থেকে গ্রামের মানুষ পানি সংগ্রহ করছে। আমাদের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।’ মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহেদা বেগম, রেনুকা আক্তার বলেন, ‘আগে আমরা পাহাড়ের ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতাম। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় পানির পাম্পও বসাতে পারিনি। এখন তো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাম্প চালিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। আমাদের গ্রামের ১শ পরিবার এখন থেকে খাওয়ার ও রান্নার পানি সংগ্রহ করে।’ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা জানান, আমার এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। যেসব এলাকায় পানির কষ্ট বেশি সেখানে আমরা এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এলাকার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। পানির কোনো সমস্যা নাই। আমার ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, পায়ুং কার্বারি পাড়া, কুঞ্জরাম পাড়া ও ললিন্দ্র পাড়ায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে অন্তত দুই হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। আগামীতে নবায়নযোগ্য সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট নিরসনের এমন উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলোকচিত্র সাংবাদিক দিদারুল আলমের পরিবারের পাশে বসুন্ধরা
পরবর্তী নিবন্ধ৯০ দিন পর ফিরলেন চীনের তিন নভোচারী