মনে করেছিলাম এবার ‘শাট ডাউন’ দেওয়া হবে। এ কথাটা এর আগে কখনো শুনিনি। ‘লক ডাউন’ কথাটাও কী আগে কখনো শুনেছি? শুনিনি। অনেক কথাই এখন শুনছি। শিখছি অনেক কিছু। শেখার নাকি শেষ নেই। জীবনভর আমাদের শিখতে হয়। নবীন-প্রবীণ সবাই আমরা শিখছি। ‘করোনা’র কারণে সবাই আমরা এখন এক বয়সী হয়ে গেছি। ‘শাট ডাউন’ নিয়ে কৌতূহল ছিলো। কিন্তু এবারও দেওয়া হলো ‘লক ডাউন’। ‘শাট ডাউন’ জিনিসটি কি ধরনের ডাউন তা আর বুঝতে পারলাম না। তবে বলা হলো এবারেরটা হবে কঠোর লক ডাউন। আমার মনে হয় কঠোর না বলে বলা প্রয়োজন ছিলো কঠোরতম লক ডাউন। অথবা লক ডাউন প্লাসও বলা যায়। এটা আবার বলা যেতে পারে রেড লক ডাউন। আমরা এখন করোনা’র ঢেউ-এর মধ্যে রয়েছি। ঢেউ-এর সাথে দুলছি। আমরা হয়তো অচিরেই দেখবো কোনো গায়ক করোনা নিয়ে আঞ্চলিক গান গাইছেন। বলা হয়ে থাকে মানুষ রাজনৈতিক জীব, তাই করোনা নিয়েও আমরা রাজনীতি শুরু করে দেবো। আমাদের দেশে এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে ভেকসিন আসছে। আসছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে। রক্তের যেমন গ্রুপ থাকে তেমনি থাকবে ভেকসিনেরও। কেউ আমরা থাকবো চীন গ্রুপে, কেউ থাকবো রাশিয়া গ্রুপে। বিভিন্ন দেশের নামে হবে আমাদের গ্রুপ। ভেকসিন গ্রুপের কথা লেখা থাকবে জাতীয় পরিচয় পত্রে। শিশুরা এখন কথা বলা শিখবার সময় প্রথমে মা বলা না শিখে শিখবে করোনা কথাটি। জন্মাবধি সে মাস্ক মুখো মা বাবাকে দেখবে বলে তাদের আসল চেহারা দেখতে পারবেনা। যদি দেখে তবে চিনতে পারবেনা। শিশু পাঠ্য বইয়ে লেখা থাকবে, করোনা একটি মারাত্মক ব্যধি। আমাদের কালে আমরা গোরু রচনা লিখেছি। একালের ছেলে মেয়েরা লিখবে করোনা রচনা। করোনা ভাইরাসের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটছে। ঘটছে আমাদেরও। পাল্টে যাচ্ছে আমাদের চেহারা। সেদিন আমার বাসায় আমার এক বন্ধু বেড়াতে এসেছিলো। প্রথমে তাকে আমি চিনতে পারলাম না তার লম্বা চুল আর দাড়ির জন্যে। সে বললো করোনার ভয়ে সেলুনে গিয়ে চুল কাটাতে পারছেনা বলে চুল আর দাড়ি বড় হয়ে গেছে। আমি বললাম কাটাবার দরকার নেই। তোমাকে দেখতে ঠিক রবি ঠাকুরের মতো লাগছে। বন্ধুটি খুব খুশি হলো। অনেকের চুল-দাড়িই এখন বড় হয়ে গেছে। সবাইকে যে দেখতে রবি ঠাকুরের মতো লাগে তাও আবার নয়। কাউকে দেখলে মনে হয় গুন্ডা-বদমাস। কয়েকদিন আগে ঘরের কাউকে না বলে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। আস্তে আস্তে হাঁটছি। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। গাড়ি হতে এক ভদ্রলোক নামলেন। মনে হলো ম্যাজিস্ট্রেট। আমাকে বললেন আমি কি জন্যে রাস্তায় বের হয়েছি। মিথ্যে কথা বলবার অভ্যেস নেই, তাই বললাম, হাল চাল বুঝবার জন্যে বের হয়েছি। তিনি বললেন, বয়স্ক মানুষ বলে আজকে ছেড়ে দিলাম। গাড়িতে উঠে তার পাশে বসা সঙ্গিটিকে বললেন, বয়স বাড়লে এভাবেই মানুষের বুদ্ধি লোপ পায়। কথাটা কানে গেলো। কিন্তু কিছুই বললাম না। কারণ আমি একজন বয়স্ক মানুষ।