পাহাড়ে ঝুঁকি এড়াতে কয়েকদিন ধরেই মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবারও ঝুঁকিপূর্ণ ১৮ টি পাহাড়ে মাইকিং করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে অতিঝুঁকিপূর্ণ ২০টি স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে (আল হেরা মাদ্রাসা, রউফাবাদ রশিদিয়া মাদ্রাসা, ফিরোজ শাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালখান বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়) সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০৫ টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৪শ’ লোককে। এর মধ্যে অনেকে সকালের নাস্তা, অনেকে দুপুরের খাবার, আবার অনেকে সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে ফের পাহাড়ে বা অন্যত্র চলে গেছেন। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, লোকজনকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। নিরাপত্তা দিতেই পাহাড় থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তারা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতেই চায় না।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরও বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় লালখান বাজারের বাটালিহিল, মতিঝর্ণা, আকবরশাহয়ের ঝিল-১, ঝিল-২, লিংক রোড, বায়েজিদের মিয়ার পাহাড় অতিঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। তাই এসব পাহাড়ে কয়েকদিন ধরেই মাইকিং করা হচ্ছে। যাতে লোকজন নিরাপদে সরে যায়। নগরীর ৬ জন এসিল্যান্ড, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা এসব কর্মকাণ্ড দেখভাল করছেন।
চান্দগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড মামনুন আহমেদ অনিক আজাদীকে বলেন, আমার সার্কেল এলাকায় দুটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এর মধ্যে টাংকির পাহাড় থেকে এক বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এখন পাহাড়টিতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি নেই। তবে মিয়ার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এ পাহাড় থেকে মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে ৪ টি পরিবারের ২০ জনকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সতর্ক রয়েছি। মাইকিং কার্যক্রম চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেই সরিয়ে নেয়া হবে।
কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড মো. এনামুল হক বলেন, কাট্টলী সার্কেলে মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে এবং মসজিদের মাইকে বার বার সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে গতকাল বুধবার সন্ধা পর্যন্ত ৬৮ টি পরিবারের প্রায় আড়াইশ লোকজনকে ফিরোজশাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে, সকালে নাস্তা এবং দুপুরে সার্কিট হাউজ থেকে রান্না করে তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের মাঝে খাবার বিতরণ অব্যাহত থাকবে এবং তাদের মাঝে ত্রাণও বিতরণ করা হবে।
বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড মো. আতিকুর রহমান বলেন, গতকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যায় মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০ টি পরিবারের ৫৫ জন ও আগের দিন মঙ্গলবার ১৫ টি পরিবারের ২৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছি। তাদেরকে লালখানবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়। তবে সন্ধা নামার আগে আগে এসব বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আহসান আজাদীকে বলেন, নগরীতে ১৮ টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে তাই মাইকিং করা হচ্ছে। লোকজনকে সরিয়েও নেয়া হচ্ছে। এমনকি যেসব পাহাড় বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট চলছে সেসব পাহাড়ের বাসিন্দাদেরও জোরপূর্বক সরিয়ে নিয়েছি। জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ঝুঁকি এড়াতে নগর ও উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে মাইকিং চলমান রয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজ অব্যাহত আছে।