কক্সবাজারে বন্যার কবলে ৪২৫ গ্রাম

বন্যা ও পাহাড় ধসে নিহত ১২, লাখো পরিবার পানিবন্দী

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ২৮ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা চার দিনের ভারী বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢলে আজ বুধবার (২৮ জুলাই) কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে পাহাড় ধস।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বন্যায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। জেলার অধিকাংশ গ্রামই এখন বন্যার পানিতে ভাসছে।

বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া আরো ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঈদগাঁও এলাকা থেকে ৩ যুবকের মৃতদেহ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেন ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুক (২৩) ও মোহাম্মদ মোরশেদ (১৫) এবং নিহত দুই ভাইয়ের ভাগিনা দেলোয়ার হোসেন (১৬)। নিহত দেলোয়ারের বাবা একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার।

স্থানীয়দের বরাতে রামু ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা সৌমেন বলেন, “সকালে ঈদগাঁও দরগাহ পাড়া এলাকার স্থানীয় পাঁচ যুবক মিলে প্রবল বৃষ্টিতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে ঈদগাঁও খালের পানিতে নামে। এসময় তাদের মধ্যে দুইজন কূলে উঠতে সক্ষম হলেও বাকি তিনজন ভেসে যায়। পরে এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।”

তিনি বলেন, “খবর পেয়ে রামু ফায়ার স্টেশনের একটি দল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তা চাওয়া হয়। পরে বিকাল ৪টায় রামু ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ‘প্রদীপ ডুবুরি দলের’ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে নামে এবং তাদের দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কিছুদূর এলাকা থেকে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।”

এছাড়া বন্যায় ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উখিয়া থেকে ৩ জন এবং মহেশখালী থেকে আরো ১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আজ বুধবার।

টেকনাফে পাহাড় ধসে বুধবার একই পরিবারের ৫ জন মারা যায়। পরে দমকলকর্মীরা পাহাড় চাপা মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুধবার বিকালে জানান, টানা বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজার জেলার ৪৪টি ইউনিয়নের ৪২৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার ৩শটি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, কক্সবাজার জেলার দুই প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহ সাগরে জোয়ার চলাকালে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, কক্সবাজার জেলার ৭১ ইউনিয়নের ৪৪টিই এখন বন্যা আক্রান্ত। এসব বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গত লোকজনকে সরকারি তরফ থেকে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবারও সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকার কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যায় সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগান।

কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে যে সমস্ত নৌযান চলাচল করে সেসব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। কক্সবাজারে আগামীকাল বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে রাজবন বিহারে ক্ষুধার্ত বানরদের খাদ্য দিলেন জেলা প্রশাসক
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭ করোনা শনাক্ত