বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়েছে নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ির মাঝিরঘাট রোডের মেসার্স লেমন্ড অ্যাপারেলস অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। ভুয়া রপ্তানি দেখানোর মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত ২ কোটি ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮০ টাকার কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে, এমনটাই ধারণা করছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি বন্ড কমিশনারেটে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে প্রেরিত এক চিঠিতে ভুয়া রপ্তানির বিষয়টি উঠে আসে। এদিকে এ ঘটনায় বন্ড কাস্টমস থেকে শিগগিরই মামলা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বন্ড কর্মকর্তারা বলছেন, লেমন্ড অ্যাপারেলসের মালিক ইকবাল চৌধুরী কারখানা ও অফিস বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপন করেছেন। আমরা বিভিন্ন সময় তার অফিসে চিঠি পাঠাতাম, কিন্তু সেইসব চিঠি রিসিভ না করার কারণে আমাদের কাছে ফেরত আসতো।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স লেমন্ড অ্যাপারেলস এন্ড গার্মেন্টস লিমিটেড নগরীর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ওআর নিজাম রোড শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক নিউ মার্কেট শাখায় মোট ১১টি রপ্তানি চুক্তি সরবরাহ করে, যা পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট এডি কর্তৃক লিয়েন করা হয়। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা হলে লেমন্ড অ্যাপারেলসের সাথে কোনো ধরণের চুক্তি হয়নি এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরণের সমঝোতা নেই বলে নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ রপ্তানিকারক প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এডি ব্যাংক শাখার কাছে ভুয়া রপ্তানি চুক্তি সরবরাহ করে। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে পাওয়া ৮টি এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে পাওয়া একটি বিল অব ল্যাডিং (বিএল) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবগুলো বিএলই স্যালায়েন্ট ফ্রেইট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যুকৃত। এছাড়া বিএলে উল্লেখিত কন্টেনার নাম্বারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনলাইন কন্টেনার ট্র্যাকিং সিস্টেমে যাচাই করা হলে কোনো কন্টেনারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়-আইএসও কোড অনুযায়ী শিপিং কন্টেনারের নাম্বার হবে সাত অংকের। এক্ষেত্রে রপ্তানিকারক ছয় অংকের ভুয়া কন্টেনার নাম্বার উল্লেখ করেন। কন্টেনার বৈধ কিনা সেটি অনলাইন সিস্টেমে যাচাইকালে দেখা যায়, সবগুলোই অবৈধ কন্টেনার নাম্বার।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোনো প্রকার রপ্তানি না করেই বরং জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভুয়া কন্টেনার নাম্বার সম্বলিত বিএল তথা ভুয়া রপ্তানি দলিল তৈরি করে রপ্তানি দেখিয়েছে। অন্যদিকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিল অব এঙপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। ভুয়া চুক্তিতে উল্লেখিত ক্রেতা পমি ডি টামাসেল্লি এসআরএল থেকে পাওয়া ১০টি ভুয়া চুক্তি এবং ট্রেন্ডিসেট অরিজিনালস নামের অপর ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের একটি রপ্তানি চুক্তির আওতায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি ব্যবহার করে অগ্রণী ব্যাংক নিউমার্কেট শাখার মাধ্যমে ৪০ হাজার ১৫০ ডলার ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও আর নিজাম রোড শাখার মাধ্যমে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৭০ ডলারসহ মোট ২ লাখ ৫৩ হাজার ২০ ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানি করা হলেও প্রকৃত অর্থে কোন রপ্তানি হয়নি। রপ্তানির অফিস ও ফ্যাক্টরি সরেজমিন পরিদর্শনে এডি ব্যাংক ফ্যাক্টরি ও অফিস বন্ধ পাওয়া যায় মর্মে উল্লেখ করে। বন্ডেড ওয়ারহাউস ব্যবস্থায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত মোট ২ লাখ ৫৩ হাজার ২০ ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানি করে যেহেতু রপ্তানি হয়নি, এমনকি রপ্তানিকারকের ফ্যাক্টরি ও গুদাম বন্ধ রয়েছে, তাই কাঁচামালগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে মর্মে ধারণা করা যায়। যা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ব্যাক টু ব্যাক এলসির কমিশনের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ গ্রহণ করেছে। যেহেতু রপ্তানি হয়নি তাই, গ্রাহক পর্যায়ে এলসির কমিশনের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির কোনো সুযোগ নেই।
কাস্টমস বন্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ২ লাখ ৫৩ হাজার ২০ মার্কিন ডলার বর্তমানে ৮৪ টাকা হারে হিসাব করলে দেখা যায় ২ কোটি ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮০ টাকার কাঁচামাল তিনি আমদানি করেন। বিপরীতে পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করার কথা থাকলেও তিনি তা করেনি। এতে সহজে বুঝা যায়, তিনি বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, লেমন্ড অ্যাপারেলসের বিরুদ্ধে এর আগের রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টায় তিনটি মামলা হয়েছে। রপ্তানির বিপরীতে উনি আমাদের পিআরসি দেখাতে পারেননি। এখন তো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে প্রমাণ পাওয়া গেলো, লেমন্ডের মালিক সকল ভুয়া দলিল উপস্থাপন করে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়েছেন।