সাগরে জাল সনদে চলছে অসংখ্য নৌযান

বাল্ক জাহাজ আটক, মালিকপক্ষের অস্বীকার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ জুলাই, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে জাল সনদে কিংবা অনিবন্ধিতভাবে অসংখ্য নৌযান চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাগরে জাহাজ চলাচলে নিবন্ধন প্রদানকারী দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের এক নোটিশে এ অভিযোগ উঠে আসে। ইতোমধ্যে কোস্টগার্ড ও নৌ-বাণিজ্য দপ্তর যান নিবন্ধনধারী একটি বাল্ক জাহাজ আটকের পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তবে আটক এমভি লা মেরিন-২ নামের জাহাজটির কাগজপত্রে উল্লেখ করা মালিকপক্ষও জাহাজটি তাদের নয় বলে দাবি করেন।
নৌ-বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে বহির্নোঙর থেকে “এমভি লা মেরিন-২” নামের বাল্ক কার্গো জাহাজটি আটক করে কোস্টগার্ড। পরবর্তীতে নৌ-বাণিজ্য দপ্তর জাহাজটির সনদ নিরীক্ষা করে রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে সনদ জাল বলে প্রমাণ পায়। জাল ওই সনদে দেখানো হয়, জাহাজটির সনদ নং- ০৬.১০০১৭৪১৩, সার্ভে সনদের মেয়াদ ২০২২ সালের ১ এপ্রিল এবং সনদ প্রদানের তারিখ দেখানো হয় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল। মালিকের নাম দেখানো হয় মো. জাকির হোসেন আজাদ, কোম্পানির ঠিকানা- মেসার্স হোমল্যান্ড শিপিং লাইন্স, এইচ-৯৭/২, ৫ম তলা, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক, বনানী, ঢাকা। সনদে উল্লেখ করা মুঠোফোনে জানতে চাইলে জাকির হোসেন আজাদ দাবি করেন, কোস্টগার্ড ও নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের কাছে আটক এমভি লা মেরিন-২ জাহাজটি তাদের নয়।
নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জলসীমায় চলাচলরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মালবাহী কার্গো ভেসেল (কোস্টার), ট্যাংকার, ট্রলার, ফিশিং বোট, কার্গো বোট ইত্যাদি নৌযান নকল সনদ ( রেজিস্ট্রেশন সনদ, বার্ষিক সার্ভে সনদ) নিয়ে চলাচল করছে। অনেক নৌযানে কর্মরত বহু মাস্টার, ড্রাইভার ও স্কিপারের সনদও জাল। এছাড়াও অনিবন্ধিত বাল্কহেড দ্বারা বহির্নোঙর থেকে মালামাল লোড-আনলোড করা হচ্ছে।জাল সনদ কিংবা অনিবন্ধিত নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যানেল, জানমাল ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। ইদানিং চট্টগ্রাম বন্দরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা বহির্বিশ্বে বন্দরের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। জাল সনদ ব্যবহার ও বাল্কহেড দিয়ে মালামাল পরিবহন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
জাল সনদধারী নৌযান চলাচলের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ গতকাল রোববার বিকেলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে একটি লাইটারেজ পেয়েছি। এটি কোস্টগার্ড জুন মাসের শেষে আটক করে। আমরা কোস্টগার্ড থেকে বিষয়টি জানার পর নিরীক্ষা করে জানতে পারি “এমভি লা মেরিন-২” জাহাজটির যাবতীয় সনদ জাল। জাহাজে ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন সনদ ও সার্ভে সনদ দুটোই জাল। আমরা জাহাজটির মালিক পক্ষকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক নৌযান আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। জাল সনদের বিষয়ে ফৌজদারি মামলা করতে হলে তা আইন শৃংখলা বাহিনী হিসেবে নৌ-পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘সাগরে অবৈধ নৌযান চলাচলের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধ নৌযানের মালিক, মাস্টার, নাবিকও এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেসরকারি আইসিডি থেকেও খালাস হবে সব ধরনের পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধরেকর্ড জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজও বাংলাদেশের