২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা হয়েছে

জাপান থেকে এল অ্যাস্ট্রাজেনেকার আড়াই লাখ ডোজ

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৫ জুলাই, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের মানুষের জন্য ২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল শনিবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ, অক্সিজেন সংকট, হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে এই ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সেরাম ইনস্টিটিউটের চালান আসা বন্ধের কারণে যাদের কোভিড টিকা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া আটকে আছে, তাদের জন্য সুখবর এসেছে। বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে গতকাল। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখের মতো লোক ভ্যাকসিনেটেড হয়েছেন। আমরা যে বিভিন্ন ভ্যাকসিন অর্ডার করেছি এবং প্রতিশ্রুতি পেয়েছি তার সংখ্যা ২১ কোটি। এর মধ্যে চায়নার ৩ কোটি, ৩ কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কোভ্যাক্সের ৭ কোটি, রাশিয়ার ১ কোটি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির ৭ কোটি, যেটা আগামী বছরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। অর্থাৎ ২১ কোটি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছি। এ ভ্যাকসিনগুলো দেওয়া হলে আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ লোককে দেওয়া যাবে। ভ্যাকসিনগুলো আমরা যদি পাই, তাহলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিনে কোনো দেশ থেকে আশা করি পিছিয়ে থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশে যত করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তার ৯০ শতাংশ ননভ্যাকসিনেটেড রোগী। ভ্যাকসিন না নেওয়ার কারণে তারা সংক্রমিত হয়েছেন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছে তার ৭৫ শতাংশ গ্রামের লোক। এদের ৯০ ভাগ আবার বয়স্ক লোক। আমরা যদি তাদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যু কমে যাবে। বয়স্ক লোকেরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অনেক ক্ষেত্রে মারা যান। যারা অপেক্ষাকৃত যুবক তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এটা কম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মধ্যবয়স্ক যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যারা বেশি বয়স্ক তাদের মধ্যে পুরুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। সুতরাং আমাদের এই দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ কেন বাড়ছে, এটা আমরা সবাই জানি। এখনও অনেকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। এখনও অনেকে মাস্ক পরতে চান না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চান না। বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়ান। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক পরা প্রয়োজন-এটা কেউ জানে না, এটা এখন কেউ বললে আমি মেনে নেব না। এটা সবাই জানেন, কিন্তু মানেন না, তাই আমরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছি।
জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়লে সমগ্র দেশ ভেঙে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী এ কারণেই স্বাস্থ্যসেবাকে এত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্যসেবা ভালো থাকলে অন্যান্য বিষয়ও ভালো থাকবে। আমরা ভারত থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০০ মেট্রিক টন লিকুইড অক্সিজেন আনার ব্যবস্থা করেছি। অর্থাৎ মাসে ৮০০ মেট্রিক টন লিকুইড আনার ব্যবস্থা করেছি। এর পাশাপাশি আমাদের যেগুলো তা তো আছেই। সরকার প্রায় ৪৩টা বড় সাইজের অক্সিজেন জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছে। যেটা মিনিটে ৫০০ থেকে ৬০০ লিটার অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ প্রায় ২৫০টি ভেন্টিলেটর পাচ্ছি। নিজেদের যা আছে তার পাশাপাশি আরও ৩৫০টি ভেন্টিলেটর ক্রয় করা হচ্ছে।
এল অ্যাস্ট্রাজেনেকার আড়াই লাখ ডোজ টিকা : কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান থেকে আসা ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকা গতকাল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের হাতে হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। টিকা গ্রহণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা সৌভাগ্যবান। কারণ, যে টিকার জন্য অনেকে অপেক্ষা করছেন, প্রায় ১৫-১৬ লাখ লোক, এই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষা করছিলেন। আমরা খুবই আনন্দিত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ জাপান আজকে ২ লাখ ৪৫ হাজার অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা ‘গ্যাভি’ এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হলো কোভ্যাক্স। অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও যাতে করোনার টিকার ন্যায্য হিস্যা পায়, তা নিশ্চিত করতে এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে।
গত ১৩ জুলাই ফেইসবুক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান ২৯ লাখ টিকা পাঠাবে। এছাড়া চীন ১০ লাখ ডোজ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেবে।
এদিকে এ পর্যন্ত যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ পূর্ণ করতে হলে আরও ১৫ লাখ ২১ হাজার ৯৪৭ ডোজ টিকা দরকার।
আগামী শুক্রবার জাপান থেকে দ্বিতীয় চালানে পাঁচ লাখের মতো টিকা আসবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী শুক্রবার তারা এর থেকে ডাবলের বেশি দেবে। সর্বমোট তারা ৩০ লাখ ৫০ হাজার অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেবে। আগে বলেছিল ২৯ লাখ দেবে, তার পরে আরও দেড় লাখ যোগ হয়েছে।
জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জাপান আমাদের পুরনো বন্ধু। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার থেকে জাপান আমাদের সাথে ছিল। আমাদের এই কঠিনতম সময়ে জাপান আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা খুব ভাগ্যবান জাপান আমাদেরকে টিকা দিচ্ছে।
কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এবং মডার্নার তৈরি ৫৫ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে। এর বাইরে চীনের উপহার হিসেবে পাঠানো এবং কেনা টিকা মিলিয়ে মোট ৫১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদুল আজহায় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু কোরবানি
পরবর্তী নিবন্ধচামড়ায় এবারও ধস