সিআরবি রক্ষার ইস্যুটি উঠে এল সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানেও। গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সিআরবি রক্ষা প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের একটি নান্দনিক ও ঐতিহাসিক জায়গা। সেটি নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ রাখার কারণে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পদকে ভূষিত হয়েছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ হবে না।
তিনি বলেন, সিআরবিতে পরিবেশ নষ্ট হোক, গাছপালা কাটা হোক, সেটি আমিও ব্যক্তিগতভাবে চাই না। সরকার জনগণের বিপক্ষে কোনো কাজ করবে না। আমিও বিষয়টি যথাযথ জায়গায় উপস্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, সমাজের অব্যক্তদের পক্ষে আমাদের কথা বলা দরকার। সমাজ যেদিকে তাকায় না সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকরা ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতাবান করতে পারে, অব্যক্তদের পক্ষে কথা ব্যক্ত করতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশটা যে এগিয়ে যাচ্ছে সে গল্পটাও মানুষকে আমাদের জানাতে হবে। তাহলে মানুষ আরও স্বপ্ন দেখবে। দেশও স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। মানবিক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, যাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ আখ্যা দিয়েছে, তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। অথচ এটার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো জোরালো দাবি ছিল না।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজে এমন অনেক বিষয় আছে, সমাজ সেদিকে তাকায় না। রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো পাগলের পেছনেও কিছু একটা গল্প আছে, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকানো মানুষটার কিছু বেদনা আছে। সেই বেদনা শোনার সময় সমাজের নাই। সমাজ তাকে জিজ্ঞেস করে না। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেটি অনুসন্ধান করে সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা লেখনির মাধ্যমে সমাজকে উজ্জীবিত করতে পারে। একজন সাংবাদিকের অনেক ক্ষমতা, সেই ক্ষমতা হয়তো নিজে অনুভব করে না। একজন সাংবাদিক যার মুখে ভাষা নেই তাকে ভাষা দিতে পারে। যে কথা বলতে ভুলে গেছে কিংবা ভয় পায় তার মুখে ভাষা দিতে পারে। যে স্বপ্ন দেখতেও ভুলে গেছে, স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, তাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। এখানে বিতর্ক থাকবে, সমালোচনা থাকবে। কিন্তু এটির পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হয়। ভালো কাজের যদি প্রশংসা না হয় তাহলে যারা ভালো কাজ করে তারা কখনও উৎসাহ পাবে না। সরকারে থাকলে সবই যে খারাপ সেটি বিশেষ করে বিএনপিসহ কেউ কেউ মনে করে। তারা সরকারে থাকলে সব ভালো, আমরা সরকারে থাকলে সব খারাপ। দেশটা কি এমনি এমনি এগিয়ে গেল?
তিনি বলেন, গত সাড়ে ১২ বছরে মানুষের যে উন্নয়ন হয়েছে তা কল্পনাতীত। আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে এই এগিয়ে যাওয়া।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের জন্য ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার ৩ লাখ টাকা পাচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলেও টাকা পাচ্ছে। সামপ্রতিক সময়ে কল্যাণ ট্রাস্টে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের পড়ালেখার ক্ষেত্রেও অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেই শুধুমাত্র সাংবাদিকদের করোনাকালীন এককালীন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেটা আশপাশের ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানসহ কোনও দেশে করেনি। প্রধানমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন করোনাকালীন সহায়তার জন্য। ঈদুল আজহার আগেই সেগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হচ্ছে দেশটাকে গড়া, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশটাকে নিয়ে যাওয়া এবং একটি মানবিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সিআরবিকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আপনার মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানতে চাই, সিআরবিতে হাসপাতাল হবে নাকি হবে না।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, সিআরবি রক্ষায় আমরা প্রথম থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।