পেকুয়ার রাজাখালীতে ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে তাবাসসুম জন্নাত রেখা মণি (১৪) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাটি ঘটে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজির পাড়া এলাকায়।
আত্মহননকারী কিশোরী ওই এলাকার দিনমজুর আইয়ূব আলীর কন্যা এবং রাজাখালী বেশারাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাড়িতে মা-বাবার অনুপস্থিতির সুযোগে গভীর রাতে ৩ বখাটে তাকে বাড়ি থেকে কৌশলে তুলে পার্শ্ববর্তী একটি মৎস্য প্রকল্পের টং ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
পরে তার শোর চিৎকারে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
এলাকাবাসী ধারণা করছেন, ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তাবাস্সুম।
নিহত তাবাস্সুমের বাবা দিনমজুর আইয়ুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার সময় আমি এবং আমার স্ত্রী বাড়িতে ছিলাম না। আমার ছেলে ও মেয়েকে বাড়িতে রেখে আমরা বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। শনিবার ভোররাতে ছেলে রাসেল ফোন করে আমার মেয়ে তাবাস্সুম বিষপান করেছে বলে জানালে আমি ও স্ত্রী পারভীন আক্তার বাড়িতে ছুটে আসি। এরপর মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
আইয়ুব আলী জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন স্থানীয় মৃত বাদশার ছেলে আলমগীর, নুরুল হকের ছেলে রবি আলম ও বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মকসুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম তার মেয়ে রেখা মণিকে গভীর রাতে কৌশলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মৎস্য প্রজেক্টের টং ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এই অপমান সইতে না পেয়ে আমার মেয়ে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার নিষ্পাপ মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর বলেন, “আমি যতটুকু জেনেছি, মেয়েটিকে নাকি প্রেমের সূত্রে ওই এলাকার দুই ছেলে মিলে বাঁশখালীর এক ছেলেকে দেখা করাতে বাড়ির পাশের একটি মাছের ঘেরের টং ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি রাতে বাড়িতে ফিরে আসার সময় স্থানীয় লোকজন গভীর রাতে একটি মেয়েকে বাইরে দেখে তাকে জেরা করে। লোকজন দেখে ফেলায় অপমানে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে লোকজন আমাকে জানিয়েছে।”
এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, “ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে মেয়েটি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে খবর পেয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।”
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ উঠে আসবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। আর সেই অনুযায়ী পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।