এক দিনে রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যুতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার পেরিয়ে গেছে। গত ১১ জুলাই এক দিনে রেকর্ড ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেল। এছাড়া দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে আবার। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের শেষ দিন ১৪ জুলাই দেশে মোট মৃত্যু পৌঁছেছিল ১৭ হাজারে। সেই তালিকায় আরও এক হাজার নাম যুক্ত হতে সময় লাগল মাত্র পাঁচ দিন। মাত্র ১৫ দিনে মৃত্যু হলো তিন হাজার মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩১ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট ১৮ হাজার ১২৫ জনের মৃত্যু হলো। গত এক দিনে দেশে প্রায় ৪৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১৩ হাজার ৩২১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩১০ জন। খবর বিডিনিউজের।
কেবল ঢাকা বিভাগেই এক দিনে ৬ হাজার ৫৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। চট্টগ্রাম বিভাগে রোগী শনাক্ত বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২৮৮ জন। আর যে ২৩১ জন মারা গেছেন, তাদের ৭৩ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৫৭ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৯ হাজার ৩৩৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৩ জন।
দেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ। তা ১১ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ১৮ জুলাই। তার আগে ১২ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর গত সাত দিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ১৩ হাজারের নিচেই ছিল। এমনকি পরীক্ষা কমায় ১৭ জুলাই তা নয় হাজারেরও নিচে নেমেছিল। গতকাল তা আবার ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ১০ জুন তা ১ হাজার ছাড়ায়। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটে। গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গতকাল তা পৌঁছাল ১৮ হাজারে। বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪০ লাখ ৯১ হাজারের বেশি মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৮টি ল্যাবে ৪৫ হাজার ১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৩ লাখ ৩৯৯টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা আগের দন ২৯ দশমিক ০৯ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭৬৫ জন, কঙবাজারে ১৮৩, ফেনীতে ১৭৩ জন, নোয়াখালীতে ১৮৬ জন, চাঁদপুরে ১৩৪ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০৬ জন এবং কুমিল্লায় ৫৫৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
মৃত ৩৩১ জনের মধ্যে ১৩৯ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১৩৬ জন ছিলেন পুরুষ, ৯৫ জন নারী। ১৬৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৮ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।