করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা কিছুটা সামলে ওঠা প্রতিবেশী দেশ ভারত এখন মহামারীর তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায়।
ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল রিসার্চের মহামারী ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রধান ডা. সমীরণ পাতিল এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) জানিয়েছে এনডিটিভি। বিডিনিউজ
আগস্টের শেষ দিকেই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি। তবে একইসঙ্গে বলেছেন, তৃতীয় ঢেউ দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তীব্র নাও হতে পারে।
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিস্থিতি সামলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা ভারতের নাভিঃশ্বাস ওঠে এই বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে।
গত এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেলে প্রবল চাপে পড়ে ভারত। হাসপাতালে ঠাঁই না পেয়ে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুতে বেসামাল হয়ে পড়ে দেশটি।
এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের শুরুতে ভারতে দিনে ৩-৪ লাখ করে রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর হার বিশ্ববাসীকেও উদ্বিগ্ন করে তুলছিল।
মে মাসের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা দিয়েছে। দৈনিক শনাক্ত ধারাবাহিকভাবে কমে বুধবার ৩৮ হাজারে নেমে আসে। দৈনিক মৃত্যুও কমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার নাগাদ ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার জন, আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার জন। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় এবং মৃতের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।
ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই দেশটির বিপর্যয়ের মুখে পড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা; যে ধরনটিকে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডেল্টার দাপট এখনও চলায় কিছু দিনের মধ্যে ভারতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসার আভাস দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. সমীরণ এনডিটিভিকে বলেন, আর এক মাস বাদে অগাস্টের শেষ দিকেই সেই সময়টি আসতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
তিনি বলেন, “তবে এর মানে এই নয় যে এটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সেই তীব্রতা নিয়ে আসবে।”
চারটি কারণে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন এই মহামারী বিশেষজ্ঞ।
প্রথমত, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে যাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, রোগ প্রতিরোধে তার কার্যকারিতা ফুরিয়ে যাওয়া; দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব; তৃতীয়ত, অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে না পারলেও দ্রুত ছড়াতে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব; চতুর্থত, বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিধি-নিষেধ শিথিল।
সপ্তাহখানেক আগেই ভারতের শীর্ষ চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যেভাবে বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হচ্ছে, জনসমাগম ঘটছে, তাতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বৃহস্পতিবারই বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে বিশ্ব এখন সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের দ্বারে রয়েছে।
ডেল্টার আরেকটি পরিবর্তিত রূপও ধরা পড়েছে ভারতে যাকে বলা হচ্ছে ডেল্টা প্লাস।
এটাই কি তৃতীয় ঢেউয়ের কারণ হবে- এমন প্রশ্নে ডা. সমীরণ বলেন, “ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস, দুটোই এখন দেশজুড়ে সক্রিয়। তবে আমি আশা করি না যে ডেল্টার জন্য আগের মতো বড় বিপর্যয় দেখা দেবে।”