নগরীর সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চুক্তিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন নগরবাসী। যেকোনো মূল্যে এই উদ্যোগ ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যে নগরীর বিশিষ্টজনেরা বিবৃতি দিয়ে এই উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার সিআরবিতে প্রস্তাবিত হাসপাতালের স্থানে বিপুল পরিমাণ গাছের চারা রোপণ করে ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদের আয়োজন করে কিছু যুবক। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সিআরবিকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা অথবা রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। এই কার্যক্রম বন্ধের জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ বুধবার আইনি নোটিশ প্রদান করা হবে।
সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতিবাদে যখন উত্তাল হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম, ঠিক তখনই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই দৃষ্টিনন্দন সবুজ জায়গায়, পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে এই উন্মুক্ত জায়গায় যেন অবকাঠামো নির্মাণ না হয়, এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের জায়গা আর উন্মুক্ত জায়গাসমূহের স্থান এক নয়, বা একই জায়গায় কিনা, সেটি নিয়ে আলোচনা হবে। একই স্থানে হলে সেটিকে সরানোর প্রয়োজন হবে। কোনোভাবেই উন্মুক্ত জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে না।’
নওফেল লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। সুতরাং বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আস্থা রাখুন। চট্টগ্রামে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদরদফতর সিআরবির একটি জায়গায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণ এবং পরিবেশ ও বৃক্ষ সংরক্ষণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে শীঘ্রই আলোচনা করে এর একটি সমাধান করা হবে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়ায় নগরবাসী নানাভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। সিআরবিতে কোনো প্রকার স্থাপনা জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব হবে না উল্লেখ করে তারা বলেছেন, এই ধরনের উদ্যোগ চট্টলাবাসীর ‘ফুসফুসে’ আঘাত করার মতো সিদ্ধান্ত হবে। দয়া করে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন। আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সিআরবিকে বাঁচান।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির স্থায়ী পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন চৌধুরী, কার্যকরী কমিটির চেয়ারম্যান ডাক্তার শেখ শফিউল আজম ও মহাসচিব এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর এক বিবৃতিতে বলেছেন হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ক্রমাগতভাবে এ চট্টলার নান্দনিকতা অবলুপ্তির দিকে। নানানভাবে নানা ইস্যুতে জৌলুস হানি ঘটে চলেছে এ চট্টলার। যা শুধু দুঃখজনক নয়, গ্লানিকরও বটে। এখন আবার হাসপাতাল নির্মানের নামে রেলওয়ে সিআরবিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে চট্টগ্রাম বিদ্বেষী একটি দুষ্টচক্র। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেড কোয়ার্টার ছিল এই সিআরবি, সিআরবির এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চট্টগ্রামবাসী কখনও মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নে অনুমোদন দেয় কমিটি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এই চুক্তির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম উত্তাল হয়ে উঠছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যেকোনো মূল্যে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন।