বে টার্মিনালে অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক

ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল তৈরির পুরো অর্থ দেবে সংস্থাটি ।। তিন টার্মিনালের একটি করবে বন্দরে, বাকি দুটি বিওটি ভিত্তিতে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বহুল প্রত্যাশার বে টার্মিনালে অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক (এডিবি)। সাগরে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল তৈরির প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যয়ের যোগান দেবে সংস্থাটি। তিনটি পৃথক টার্মিনাল নিয়ে গড়ে উঠবে বে টার্মিনাল। এরমধ্যে প্রথম টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই করবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টার্মিনালটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিওটি ভিত্তিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে প্রস্তুত করা হবে। জায়গার সংকট ঘোচার পরপরই বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন গতিতে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে।
সিঙ্গাপুরের আদলে সাগর ভরাট করে উদ্ধার করে আনা ভূমিতেই নির্মিত হবে বে টার্মিনালের অবকাঠামো। এটিই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রিক্লেইমের ঘটনা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন, খাস জায়গা এবং সাগর ভরাট করে তুলে আনা ভূমি মিলে সর্বমোট আড়াই হাজার একর ভূমিতে বিস্তৃত হবে বে টার্মিনালের কার্যক্রম। বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে চারশ’ একর ভূমিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুনেরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় হবে বে টার্মিনালের কার্যক্রম। শুধু ভূমি রিক্লেইমই নয়, এই টার্মিনালে একটি চ্যানেল তৈরি করতে হবে। বিদ্যমান চরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া খালের মতো একটি অংশকে ড্রেজিং করে চ্যানেল তৈরি করা হবে। এটিই বে টার্মিনালের মূল চ্যানেল। এই চ্যানেলেই ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম বন্দর।
বে টার্মিনালের চ্যানেলটিকে ঠিকঠাকভাবে পরিচালনা করার জন্য বঙ্গোপসাগরে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করতে হবে ব্রেক ওয়াটার । ব্রেক ওয়াটার এবং চ্যানেল তৈরির কাজটি খুবই ব্যয়বহুল। বিশ্বব্যাংক এই দুইটি কাজের জন্য অর্থায়ন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। ব্রেক ওয়াটার এবং চ্যানেল তৈরির জন্য যত টাকারই প্রয়োজন হোক না কেন তার পুরোটাই বিশ্বব্যাংক যোগান দেবে। গত ৮ জুন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই অবস্থায় দেশের আগামী দিনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনা করতে হালিশহর সমুদ্র উপকুলে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপকুলীয় ৯৩৯ একর ভূমিসহ সাগর ভরাট করে প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহন করা হলেও প্রাথমিকভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর জায়গা হুকুমদখল করা হয়েছে। এই জায়গাটিতে সীমানা দেয়াল নির্মাণসহ ভরাট করার কার্যক্রম ছাড়া বে টার্মিনালের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি বিগত কয়েক বছরে। বিশেষ করে সরকারের ৮৭১ একর খাস জায়গার বরাদ্দ নিয়ে বিষয়টি ঝুলে ছিল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে উক্ত খাস জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। জায়গাটি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে নাকি টাকার বিনিময়ে দেয়া হবে সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে জায়গাটি পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর জায়গার বাইরে সাগর ভরাট করে আরো অন্তত ৫শ’ একর ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সরকারি খাস জায়গার পাশাপাশি আরো প্রায় ১১শ’ একর ভূমি সাগর ভরাট করে পাওয়া যাবে। প্রকল্পটিতে মোট ১৬শ’ একর ভূমি সাগর ভরাটের মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
বে টার্মিনালে মোট তিনটি টার্মিনাল থাকবে। প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার লম্বা ছয়টি জেটি থাকবে। অর্থাৎ একটি টার্মিনালে ১৮শ’ মিটার লম্বা জেটি এবং পশ্চাদসুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি টার্মিনালে একই সাথে ছয়টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। তিনটি টার্মিনালের প্রথমটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরা বাস্তবায়ন করবে। বাকি দুইটি টার্মিনাল আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে। এই দুইটি টার্মিনাল নির্মাণে বিওটি (বিল্ড অপারেট এন্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হবে। তারা টার্মিনালটি নির্মাণ করে ইকুইপমেন্ট স্থাপনসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিজেরাই টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট সবকিছুসহ হস্তান্তর করে নিজেরা চলে যাবে।
২০২৪ সালের মধ্যে বে টার্মিনালের দক্ষিন প্রান্তের প্রথম টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
এই ব্যাপারে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জায়গা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংকের সাথেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যও হয়েছে। আমরা নিজেরাই একটি টার্মিনাল করবো। শুরুতে ওই টার্মিনালেই জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৪ সালে বে টার্মিনালের প্রথম টার্মিনালটি চালু করার লক্ষ্য রয়েছে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস
পরবর্তী নিবন্ধউপজেলার ৬ ও শহরের ৪জনসহ চট্টগ্রামে আরও ১০ জনের মৃত্যু